৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিএনপি আগামীতেও আরও ছাড় দিতে প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি গত ১৬ বছরে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে আগামীতেও আরও ছাড় দিতে প্রস্তুত। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার নামে কমপক্ষে একটি মিথ্যা মামলা নেই। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এগিয়ে এলে দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী হবে, কারণ জাতীয়তাবাদী দল বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে জনগণের পাশে থাকার এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি নেতাকর্মীদের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গত বছর স্বৈরাচারী শক্তি তাদের ওপর চেপে বসেছিল, কিন্তু এখন তারা জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি এর কারণ হিসেবে ওই দলের নেতাকর্মীদের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার আদর্শের প্রতি আনুগত্য রেখে তিনি বলেন, বিএনপি এমন কোনো কাজ করবে না যা জনগণকে বিরক্ত করবে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে খুন, গুমের মতো ঘটনা না থাকায় নেতিবাচক কাজ এড়িয়ে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত না করার জন্য সতর্ক করেন।

তারেক রহমান দলের সুনাম রক্ষায় সবার সচেতনতা কামনা করেন এবং দলের দুর্নাম হয় এমন কাউকে প্রশ্রয় না দেওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা দেন। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করারও আহ্বান জানান। কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে না নেওয়ার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করেন।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আগামী কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যালট পেপারের মাধ্যমে কাউন্সিলররা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন, যা বিএনপির গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিফলন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হবে যে বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি আগামীতে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ যেন অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে জন্য নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলেও জানান। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির এই সম্মেলনকে ঘিরে শহরজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা গেছে। গেট, ব্যানার ও ফেস্টুনে শহর সজ্জিত ছিল। সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে উপস্থিত হন।

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক নান্নু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রোয়ানুল হক টিটু এবং সদস্য হাসান মামুনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে জেলার হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমানের বক্তব্য শেষে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবারের সম্মেলনে আট উপজেলা, পাঁচ পৌরসভা ও আহ্বায়ক কমিটিসহ ১৪ ইউনিটের প্রায় দেড় হাজার সদস্য গোপন ভোটের মাধ্যমে জেলা নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। এক আইনজীবী ও দুজন কলেজ শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়া তদারকি করে। পাঁচজন প্রিসাইডিং ও ১৫ জন পোলিং অফিসার নির্বাচন পরিচালনা করেন।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের পর ২০১৩ সালের ১৪ মে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমএ রব মিয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান টোটন। ২০২০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত এই কমিটি দায়িত্ব পালন করে। এরপর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়, যা পরবর্তী পাঁচ বছর দায়িত্বে ছিল।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top