৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ভোলার তজুমদ্দিনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় শ্রমিকদল ও ছাত্রদলের তিন নেতা বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ভোলার তজুমদ্দিনে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের নির্মম ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারী বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে তার স্বামী ও পরিবার জানিয়েছেন। বুধবার দুপুরে তিনি আবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, যা নিয়ে তার স্বামী গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “সে কারও সামনে মুখ দেখাতে চাইছে না। আমরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি।”

ঘটনাটি শনিবার রাত থেকে রোববার দিনভর ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার একটি হোটেলে চাকরি করা এক বাবুর্চিকে চাঁদার দাবিতে নির্যাতন করা হয় এবং তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। মামলায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী অভিযোগ করেছেন যে, তজুমদ্দিন থানার ওসি প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করেছিলেন, যা আসামিদের পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “ওসি আমাদের রাতভর থানায় আটকে রেখেছিলেন এবং পরের দিন দুপুরে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষা করাতে পাঠিয়েছেন।” তবে র্যাব-৮ এর ভোলা ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শাহরিয়ার রিফাত অভি জানান, বুধবার এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিদের ধরতে বিশেষ অভিযান চলছে।

ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘটনাকে “ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত” আখ্যা দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ছাত্রদল অভিযুক্ত দুই নেতা—তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন (সজিব)—কে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা অপরাধীদের সঙ্গে কোনো রকম সহানুভূতি দেখাব না।”

এদিকে, জামায়াতে ইসলামী বুধবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানায়। তবে ঘটনার পর থেকে তজুমদ্দিনে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে, যাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন।

মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, যাকে ইতিমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও মাওলানাকান্দির যুবদল নেতা মো. আলাউদ্দিন, হোটেল বাবুর্চির দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা বেগমসহ আরও কয়েকজনকে মামলায় নাম দেখানো হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top