তরফদার মামুন, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের রেলপথে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা, দখলদারি ও সন্ত্রাস দেখা যায়। টিকিট কাটা সাধারণ যাত্রীদের কাছে এই স্টেশনের নামই এক আতঙ্কের synonym হয়ে গেছে।
ঢাকা-সিলেট রুটের প্রতিটি ট্রেন থামলেই এখানে নামে এক প্রভাবশালী চক্রের তাণ্ডব। প্রশাসনের চোখের সামনে যাত্রীদের থেকে জোর করে টাকা আদায়, আসন দখল, ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মে জটলা সৃষ্টি — সবই যেন নিয়মিত ঘটনা।
প্রভাবশালী চক্রের দাপট ও সন্ত্রাস
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের চারপাশে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ চক্র। ট্রেন থামার সাথে সাথেই শুরু হয় তাদের চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি, এবং টিকিটবিহীন যাত্রীদের অবাধে ওঠানো।
যাত্রীদের নিরাপত্তা, সম্মান, এমনকি জীবনের নিশ্চয়তা পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে এই চক্রের দৌরাত্ম্যে।
সাধারণ যাত্রী তো বটেই, সাংবাদিক পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেন না। সম্প্রতি এর জ্বলন্ত প্রমাণ সাংবাদিক তরফদার মামুন এর উপর নির্মম হামলা। সত্যের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, যা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
এটি কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ নয় — এটি সরাসরি স্বাধীন সাংবাদিকতা, মানুষের বাকস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক চেতনার উপর একটি ভয়ঙ্কর আঘাত।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের দায়
প্রশাসন এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা এই অরাজকতাকে দিনকে দিন আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে। যখন কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে সাধারণ যাত্রী ও সাংবাদিক আক্রান্ত হন, তখন তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ।
রেলওয়ের দায়িত্ব হলো যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সেবা এবং বিশ্বাসের মান ধরে রাখা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রভাবশালী চক্রের তোষণ ও দায়সারা দায়িত্ব পালনই যেন তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্পষ্ট দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টপেজ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দায়িত্বহীন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের জন্য নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ রেলপথ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বমহলের প্রতিবাদ
প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক, পেশাজীবী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক আন্দোলনকারী এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ। তারা সকলেই দোষীদের দ্রুততম সময়ে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে, সাংবাদিক তরফদার মামুন -এর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।