নিজস্ব প্রতিনিধি:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলমান চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণের ভয়াবহ বিবরণ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রমনা জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম আখতারুল ইসলামের সরাসরি নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যাতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদসহ ৬ জন নিহত হন।
বিচার বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন কনস্টেবল অজয় ঘোষ চাইনিজ রাইফেল হাতে থাকা সত্ত্বেও গুলি করতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তার কাছ থেকে রাইফেলটি কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজন হোসেনকে দেওয়া হয়, যিনি বিভিন্ন অবস্থান থেকে একের পর এক গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ সদস্যরা গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করার পর “গুলি লাগছে, লাগছে”, “শেষ”, “মরছে, মরছে” বলে উল্লাস করেছিলেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের “পরোক্ষ সম্পৃক্ততায়” এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যদিও সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি নীতির অধীনে তাদের বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত চলায় এই মামলায় আসামি করা হয়নি।
১৪ জুলাই এই মামলার চার আসামির ডিসচার্জ আবেদনের শুনানি শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। মামলার ৮ আসামির মধ্যে হাবিবুর রহমান, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক রয়েছেন। অপর চার আসামি মো. আরশাদ হোসেন, সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী কনস্টেবল অজয় ঘোষকে সাক্ষী করা হয়েছে, যিনি নৈতিক অবস্থান নিয়ে গুলি করতে অস্বীকার করেছিলেন। অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই অভিযানে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র, এপিসি কার, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করেছিল, যা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল দমনের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের স্পষ্ট উদাহরণ।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ জুলাই হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে আদালত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই মামলাকে বাংলাদেশে পুলিশি বর্বরতা ও জবাবদিহিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখছে।