নিজস্ব প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত টানা ৬১ দিনের এনবিআর আন্দোলনের পেছনে সরকার উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র ছিল বলে গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে। এনবিআর সংস্কার অধ্যাদেশের বিরোধিতা ছিল শুধুমাত্র একটি অজুহাত, আসল লক্ষ্য ছিল সুপরিকল্পিতভাবে সরকারকে অস্থিতিশীল করা। দেশি-বিদেশি চক্রের ইন্ধনে এই আন্দোলনকে ধীরে ধীরে ‘কমপ্লিট শাট ডাউন’-এর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা সরকারের বদলি আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণও করেছিল। গোয়েন্দা সংস্থা ও এনবিআরের নিজস্ব অনুসন্ধানে এ ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। অনেকেই এটিকে ঐতিহাসিক ‘কাশিমবাজার কুঠির’ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ইতোমধ্যে ৮৪৫ পৃষ্ঠার একটি বিশদ প্রতিবেদনে আন্দোলনকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিনিময়কৃত নানা পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গেছে। এতে একজন অতিরিক্ত কর কমিশনার অর্থ উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছিলেন, যা প্রকাশের অযোগ্য। ওই কর্মকর্তা শামীম বুলবুল, বর্তমানে ঢাকার কর অঞ্চল-২১-এ কর্মরত। তিনি তার ব্যাচমেটদের একটি গ্রুপে এ মন্তব্য করলেও পরে দাবি করেন, এটি তার ব্যক্তিগত আলোচনা ছিল এবং শত্রুতার কারণে তা ফাঁস হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের নামে প্রকৃতপক্ষে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা ধ্বংস করে সরকারকে বিপদে ফেলাই ছিল মূল লক্ষ্য। এতে একটি গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে সরকারি অফিসগুলোতে অসন্তোষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছিল। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু পলাতক নেতারও যোগাযোগ ছিল। অধ্যাদেশের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ৯০% দাবি পূরণ হলেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জুনিয়র কর্মকর্তাদের উসকে দিয়েছিল, যাদের চাকরি এখন ঝুঁকিতে পড়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, এ আন্দোলনের পেছনে至少 ১৫ জন কর্মকর্তা ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে কাজ করেছেন। তারা ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম গ্রুপ’ এর বাইরে একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পরিচালনা করতেন। এছাড়া কিছু প্রমোশনপ্রত্যাশী কর্মকর্তাও এ ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। মূল হোতাদের মধ্যে ৬০ জনের পরিচয় মিলেছে, এবং তাদের সহযোগীদের সম্পর্কেও নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে। সরকারের দাবি, এটি রাজস্ব সংস্কারের অংশ ছিল, যা আইএমএফের ঋণের শর্তও বটে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ধীরে ধীরে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণকে প্রধান দাবি বানায় এবং শেষ পর্যন্ত সরকারি আদেশ অমান্য করে বদলি আদেশ ছিঁড়ে ফেলে।
২৮ জুন ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির পর সরকার কঠোর অবস্থান নেয় এবং এনবিআরকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করে। এরপর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পিছু হটে এবং ২৯ জুন আন্দোলন প্রত্যাহার করে। তবে গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আন্দোলনের মাঝে সরকার পতনের চেষ্টা ছিল, যা বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে কাশিমবাজারের ষড়যন্ত্রের মতোই পরিকল্পিত ছিল।
এ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন কাস্টমস কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে ১৫ জন কর্মকর্তার নাম পাঠানো হয়েছে এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।