নিজস্ব প্রতিনিধি:
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল চত্বরে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার পর তার রক্তাক্ত দেহের ওপর চালানো হয়েছে অবর্ণনীয় বর্বরতা। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একদল যুবক নিহতের প্রায় নগ্ন দেহ টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় এনে বারবার লাথি-ঘুষি মারছে এবং বুকের ওপর লাফাচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী বা সাধারণ জনতা কেউই হস্তক্ষেপ করেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পূর্বপরিচিতদের সঙ্গে বিরোধের জেরে সোহাগকে ডেকে এনে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগমের বক্তব্য অনুযায়ী, স্থানীয় যুবদল নেতা মহিনুল হাসান ও তার সহযোগীরা ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করছিল, যা সোহাগ মানতে রাজি হননি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মহিনুল হাসান ও তারেক রহমান রবিনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিনের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা সোহাগকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ইট-পাথর ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তার দেহ বিবস্ত্র করে রাস্তায় ফেলে দেয়। নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, গত কয়েকদিন ধরে মহিনের হুমকির মুখে ছিলেন সোহাগ। হত্যার আগের দিন তার গুদামে গুলিও চালানো হয়েছিল।
এই ঘটনায় মিটফোর্ড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের আনসার ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার আবদুর রউফ দাবি করেন, ঘটনাস্থলে দিনের নির্দিষ্ট সময়েই আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে। তবে এখন থেকে ২৪ ঘণ্টা টহল বাড়ানো হবে।
সম্প্রতি দেশজুড়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শুধু ঢাকাতেই ১৩৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলাগুলোকেই দায়ী করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের এই ধারা সমাজে অস্থিরতা ও আইনের শাসনের অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, এমন ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি।