১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: নীল গেঞ্জি ও আকাশি শার্টধারী ঘাতকদের খোঁজে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি:

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই প্রধান সন্দেহভাজন এখনো আত্মগোপনে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নীল গেঞ্জি পরা রুহুল আমিন ও আকাশি শার্ট পরা এক অ্যাম্বুলেন্সচালক সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে ভিডিও প্রমাণে ধরা পড়েছে। তবে তাদের প্রকৃত পরিচয় ও রাজনৈতিক সংযোগ এখনো অস্পষ্ট।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, রুহুল আমিন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে কুখ্যাত। অন্যদিকে, আকাশি শার্টধারী ব্যক্তি মিটফোর্ড হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এরা আগে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল বলে দাবি করা হলেও সরকার পতনের পর নতুন রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করেছে। নিহত সোহাগের ভাগনি মীম আক্তারের অভিযোগ, স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ চক্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে তাকে হত্যা করেছে।

ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রবিন নামে এক আসামি অস্ত্র মামলায় দায় স্বীকার করেছেন। আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনিরকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নীল গেঞ্জি ও আকাশি শার্ট পরা দুই ঘাতক এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের শনাক্ত করতে বিশেষ টিম কাজ করছে।

হত্যাকাণ্ডের সময় খুব কাছ থেকে তোলা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, এত নিখুঁত ভিডিও ধারণের পেছনে পরিকল্পনা থাকতে পারে। তবে পুলিশ দাবি করছে, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের রেকর্ড করা ভিডিও থেকেই এটি সংগৃহীত।

মিটফোর্ড এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, ভাঙারি ব্যবসার মাধ্যমে ইস্পাত, তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের চোরাকারবারিরা বড় অঙ্কের লেনদেন করে। এ খাতে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট সক্রিয়, যারা ক্ষমতাসীন দলের পরিবর্তন অনুযায়ী চাঁদাবাজি করে। সোহাগ এই চক্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

ঘটনাটি দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিএনপি, জামায়াত ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠন দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের জোর তদন্ত চললেও মূল হোতাদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে।

সোহাগ হত্যাকাণ্ড এখন শুধু একটি নৃশংস ঘটনা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক সংঘাত, চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। তদন্ত যত দ্রুত এগোবে, ততই এই রহস্যের জট খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top