২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

জাতির অনুপ্রেরণার প্রতীক মাহরীন চৌধুরী: বিজিবি ও শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদন

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

শিক্ষার্থীদের প্রাণ রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গকারী বীর শিক্ষক, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রয়াত শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

রংপুর, নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও সেক্টরের বিজিবি সদস্য এবং বর্ডার গার্ড স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে বিজিবির একটি প্রতিনিধিদল নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ, নীরবতা পালন এবং দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে মাহরীন চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

গত সপ্তাহে ঢাকার বিমান দুর্ঘটনায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায়ও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন মাহরীন চৌধুরী। দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতেও তিনি হাল ছাড়েননি। আশেপাশে ছুটোছুটি, আগুনের শিখা আর আতঙ্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন মা ও শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

রংপুর বর্ডার গার্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, “মাহরীন ম্যাম শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন আমাদের মায়ের মতো। তার আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়েছে শিক্ষক মানে কেবল পাঠদান নয়— শিক্ষক মানে দায়িত্ব, ভালোবাসা আর জীবন উৎসর্গের প্রতীক।”

ঠাকুরগাঁও বর্ডার গার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী সাইফা বলেন, “স্কুলে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে বাবা-মা নিশ্চিন্ত থাকেন। মাহরীন ম্যাম প্রমাণ করেছেন, সেই আস্থা কতটা সঠিক। তার এই আত্মত্যাগ আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।”

রংপুর সেক্টরের বিজিবি কমান্ডার কর্নেল মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, “জাতি একজন মহিয়সী নারীকে হারিয়েছে। তবে তার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। তিনি তার সাহসিকতা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বিজিবি পরিবার গভীরভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী মাহরীন ম্যামের মতো আত্মদানের ইতিহাস জানুক এবং অনুপ্রাণিত হোক। বিজিবি পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সাহসিকতা জাগিয়ে তোলা হবে।”

মাহরীন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। একজন শিক্ষক কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকেন না— বিপদের সময়ও তিনি হতে পারেন আত্মত্যাগের সবচেয়ে বড় প্রতীক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকগণ, বিজিবি কর্মকর্তারা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top