২৮শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ড্রাম ট্রাকের চাকায় পিষ্ট পাউবো’র কোটি টাকার বাঁধ

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা এলাকায় প্রবহমান বুড়ি তিস্তা নদীকে বালুমহাল ঘোষণা করায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে নদীসংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত কোটি টাকার উভয় তীরের রক্ষা বাঁধ। ভারী ড্রাম ট্রাক ও যন্ত্রপাতির লাগাতার চলাচলে ইতোমধ্যেই বাঁধের পিচঢালা সড়ক দেবে গিয়ে ধসে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর ঘাট থেকে ড্রেজার মেশিন ও শক্তিশালী শ্যালো পাম্পের মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালু প্রতিদিন শতাধিক ড্রাম ট্রাকে করে পরিবহন করা হয়, যার প্রতিটিতে তিন হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এসব বালু। এসব ভারী যানবাহন বাঁধের উপর দিয়েই চলাচল করছে, যার ফলে বাঁধের অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রভাবশালী একটি মহল জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বালুমহাল ইজারা নিয়ে এই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদ ও সাধারণ মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আলিম উদ্দিন বলেন, “বাঁধ বানানো হয়েছিল আমাদের জানমাল রক্ষার জন্য। কিন্তু এখন দেখছি এই বাঁধই আমাদের মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

গৃহবধূ শিরিনা বেগম বলেন, “দিনরাত ট্রাক চলে। আমরা বারবার বলেছি, কেউ শোনেনি। এখন বাঁধ ভেঙে গেলে ভোগান্তিটা আমাদেরই হবে।”

পরিবেশবিদদের মতে, “বাঁধে ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকা উচিত। এতে কাঠামোগত ক্ষতি হয় যা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি নদীর গতিপ্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যেও পড়ে ভয়াবহ প্রভাব।”

বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি অবকাঠামোগত বা পরিবেশগত সংকট নয়; বরং এটি প্রশাসনিক গাফিলতি এবং স্বার্থান্বেষী চক্রের দাপটের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে বর্ষায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সম্পদ চরম ঝুঁকিতে পড়বে।

গোলমুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, “বাঁধটি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বর্ষার সময় এলাকায় বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। আমরা ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ এবং নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানাই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, “বাঁধটি পরিদর্শন করে মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নীলফামারী জেলার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম জানান, “এই বাঁধ শুধুমাত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে নির্মিত। এখানে যানবাহন চলাচলের অনুমোদন নেই। কারা এটি ব্যবহার করেছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, বুড়ি তিস্তা নদীকে বালুমহাল ঘোষণার সিদ্ধান্ত এখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে। কোটি টাকার বাঁধ হুমকির মুখে, নদীর পরিবেশ ধ্বংসের পথে, আর জনগণের জীবনে নেমে আসছে নতুন দুর্ভাবনা।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top