বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার (৫ জুলাই) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলাদেশ নতুন ভোরের সূচনা করে। এই দিনটি শুধু বিজয়েরই নয়, বরং গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।”
তারেক রহমান ফ্যাসিবাদী শাসনের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দেশে গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। শত শত গোপন বন্দীখানায় (‘আয়নাঘর’) নিরপরাধ মানুষকে আটকে রাখা হতো। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেকেই চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন।”
তিনি বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা হরণ, শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংস এবং ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তুলে ধরেন। তার মতে, “ব্যাঙ্ক দেউলিয়াত্ব থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের বদলে অস্ত্র তুলে দেওয়া – সবই ছিল ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ।”
জুলাই অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেড় হাজারের বেশি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। ৩০ হাজার আহতের মধ্যে অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গু বা অন্ধ হয়ে গেছেন। এই আন্দোলন ছিল ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ’।”
ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনই হবে শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত দায়বদ্ধ সরকার গঠনের কাজ করছে।”
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু তা যেন কখনো ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের কারণ না হয়।”
তার ভাষণে তিনি ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক প্রস্থানের ঘটনাকে “বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন” বলে আখ্যায়িত করেন, যখন “প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধান বিচারপতি সকলেই দায়িত্বস্থল ত্যাগ করেছিলেন।”
শেষে তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, “হাজারো শহীদের রক্তে গড়া এই ঐক্য বাংলাদেশকে চিরতরে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখবে। কেউ আর কখনো গণতন্ত্র হত্যা করতে পারবে না।”