নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও সরবরাহ সংকটের অজুহাতে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ, মুরগি ও ডিমের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকা, ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৩৫-১৪০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৭০-১৮০ টাকায় পৌঁছেছে।
ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের অভিযোগ, “গত শনিবার ৫৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ কিনেছিলাম, আজ একই পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজি। নতুন মৌসুম আসতে এখনও চার মাস বাকি, এর মধ্যেই এমন দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয়।”
বাজারে পেঁয়াজের এই দাম বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীরা বৃষ্টিজনিত সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন। কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, পাবনা ও ফরিদপুরের মোকামে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ৪০০ টাকা বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিমের বাজারে দেখা দিয়েছে নতুন অস্থিরতা। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা রাফি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডিমের দাম কম থাকায় অনেক খামারি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন, ফলে বাজারে সরবরাহে টান পড়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ লাল ডিমের দাম এক সপ্তাহে ৮৫০-৯১০ টাকা থেকে বেড়ে ১,০৪০ টাকায় পৌঁছেছে।
মাছের বাজারে ইলিশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে বড় আকারের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ২,৬০০-২,৯০০ টাকা, যা দিয়ে ৫০ কেজি চাল কেনা সম্ভব। সবজির বাজারে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা এবং গাজর ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম পৌঁছেছে ২৪০-২৮০ টাকা কেজিতে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “বর্ষা ও বন্যার মৌসুমে পণ্যের ঘাটতি স্বাভাবিক, তবে সরকারের উচিত সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করে দ্রুত বাজার স্থিতিশীল করা। শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”
এই দাম বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ ও দিনমজুর শ্রেণি। অনেক শ্রমজীবী ব্যক্তি জানান, বৃষ্টির কারণে কাজ কম থাকায় আয় কমেছে, অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। বাজার মনিটরিং জোরদার এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন ভোক্তারা।