জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী উপজেলা( পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে টিআর প্রকল্পের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা বিল দিতে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোসা. রাহিমা বেগমের স্বামী নান্নু মৃধার কাছে ওই ঘুষ দাবি করেন পিআইও মোহাম্মদ আলী।
পিআইও মোহাম্মদ আলীর ওই ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাড়ে তিন মিনিটের অডিওতে পিআইওকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাকে ৪৫ হাজার টাকা দিতে হবে।’ এ সময় নান্নু মৃধা বলেন, ‘শতভাগ কাজ করেছি। এই কাজে ১৫ পারসেন্ট টাকা দিলে তো লোকসান হবে।’ এ সময় পিআইও বলেন, ‘অনেকে তো ১৭ পারসেন্ট দেয়। আপনাকে তো আগের বছরের কাজে অনেক ছাড় দিয়েছি, সেটা তো আপনি জানেন।’
অডিওতে পিআইওকে নান্নু মৃধা বলেন, ‘আপনাকে দেওয়া টাকার কোনো ডকুমেন্ট দেওয়া হবে?’ উত্তরে পিআইও বলেন, ‘কাজের অডিট রিপোর্ট করাতে আমাদের যে টাকা দিতে হয়, তার তো কোনো ডকুমেন্ট দেওয়া হয় না।’ এরপর পিআইওকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করতে শোনা যায় তাঁকে।
এ বিষয়ে মো. নান্নু মৃধার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউপি সদস্য তাঁর স্ত্রী রাহিমা বেগমকে টিআর প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় ইউনিয়ন পরিষদ। এ বরাদ্দ দিয়ে তিনি তাঁর এলাকায় দুটি গ্রামীণ সড়কে মাটি ফেলে শতভাগ সংস্কার করান। গত জানুয়ারিতে তাঁকে ৫০ শতাংশ বিল দেওয়া হয়। ওই সময় তিনি অফিসের আনুষঙ্গিক খরচ দিয়েছেন। পরে বিলের বাকি টাকা চাওয়া হলে পিআইও তাঁর অফিসের লোকজন দিয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে ঘুরপাক খাওয়ান তাঁকে।
মো. নান্নু মৃধা আরও বলেন, এরপর গত ২৮ জুলাই তিনি পিআইওর দপ্তরে বিলের টাকা আনতে যান। এ সময় পিআইওর সঙ্গে বিল নিয়ে কথা হলে তিনি ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার কাজে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন। অতিরিক্ত টাকা দিতে তিনি অপারগতা জানিয়ে ২০ হাজার দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু পিআইও তাতে সন্তুষ্ট নন। তিনি আরও বলেন, আগের কর্মকর্তারা ৫ পারসেন্ট নিতেন; কিন্তু এই পিআইও ১৫ থেকে ১৭ পারসেন্ট টাকা নেন। অতিরিক্ত টাকা দিতে গেলে কাজের গুণগত মান ঠিক রাখার সুযোগ থাকে না।
ইউপি সদস্য রাহিমা বেগম বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর প্রকল্পের আওতায় তাঁকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় পরিষদ। এ বরাদ্দ দিয়ে তিনি পৃথক দুটি গ্রামীণ সড়কে মাটি ফেলে সংস্কার করান, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন তাঁর স্বামী নান্নু মৃধা। পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বামী পিআইও অফিসে বিলের টাকা আনতে গেলে অতিরিক্ত পারসেন্ট-সংক্রান্ত বিষয়ে ঝামেলা হওয়ার কথা তিনি জানতে পারেন।
এ বিষয়ে দুমকি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম দোলোয়ার হোসাইন বলেন, পিআইও মোহাম্মদ আলীর ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও তিনি পেয়েছেন, যা বিব্রতকর ও দুঃখজনক। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।