৯ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ডিমলায় ভয়াবহ তিস্তা নদীর ভাঙ্গন,প্রশানের নীরবতায় ক্ষুব্ধ তিস্তা পাড়বাসী, মানববন্ধনে তীব্র ক্ষোভ

মোঃ বাদশা প্রামানিক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের সাতটি ইউনিয়ন—পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি—এলাকায় ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বিশেষ করে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে তোফেল মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর একটি নতুন শাখা বের হওয়ায় শত শত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে নতুন করে শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে তিস্তার ভাঙনে অসংখ্য গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও খেলার মাঠসহ বহু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। তবে এবারের ভাঙনের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার মিটার নদীপাড় ভেঙে যাচ্ছে, যার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, বাজার ও ঘাটগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে নদীভাঙন রোধে অবিলম্বে জিও ব্যাগ ফেলার দাবিতে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিস্তাপাড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন—তিস্তা নদী সুরক্ষা আন্দোলনের নীলফামারী জেলা আহ্বায়ক আব্দুল ওদুদ, টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন, বিএনপি সভাপতি প্রভাষক ইয়াসিন আলী, গয়াবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ লিটন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবর আলী ও ডিমলা উপজেলা জিয়া পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর খানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

বক্তারা বলেন, ছোটখাতা ২ নম্বর গ্রোইন থেকে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দীঘিরপাড় রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ২.৫ কিলোমিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে পাড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। তা না হলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না এবং অচিরেই আরও কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।

তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, বিষয়টি প্রশাসন ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বহুবার জানানোর পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বক্তারা অবিলম্বে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, “ভাঙনে আমার তিন বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এবার যদি বাঁধ না দেওয়া হয়, তবে ঘরবাড়ি ও বাকি জমিও থাকবে না।” গৃহবধূ লায়লা বেগম অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, “প্রতিদিন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি—আমাদের সবকিছু একটু একটু করে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে।” ভ্যানচালক ও কৃষক রজত আলী জানান, “অনেক কষ্ট করে ৩ লাখ টাকা দিয়ে দুই বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছিলাম। কিন্তু এবারের বন্যায় পুরো ক্ষেতে পলি পড়ে গেছে। এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারব না।”

মানববন্ধন শেষে স্থানীয়রা নদীর পাড় ঘুরে দেখান এবং দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top