মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবহেলার কারণে নীলফামারীর ৩০টি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রের অধিকাংশ ফাইবার হোম মাত্র দুই বছরের মধ্যেই অচল হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি ই-সেবা কার্যক্রমে মারাত্মক ধীরগতি দেখা দিয়েছে। প্রায় ১২ লাখ মানুষ কার্যকর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, অনেক ফাইবার হোমে জমেছে ধুলা, বেঁধেছে মাকড়সার জাল। সংযোগ না থাকায় উদ্যোক্তাদের মডেম ও মোবাইল ডেটার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আগে যেখানে ১০ মিনিটে কাজ শেষ হতো, এখন সময় লাগছে এক ঘণ্টারও বেশি। এতে সেবা গ্রহীতারা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, উদ্যোক্তারাও বহন করছেন অতিরিক্ত খরচ।
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন ইনফো-সরকার প্রকল্প-৩ (পর্যায়)-এর আওতায় ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে জেলার সদর, ডোমার ও সৈয়দপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দুই এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, সরকারি দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
নীলফামারী সদরের ৪ নং পলাশবাড়ী ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা সাগর চ্যাটার্জি বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন সেবা নিতে আসেন। কিন্তু ইন্টারনেট ধীরগতির কারণে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়। এতে মানসিক চাপ ও খরচ— দুটোই বাড়ছে।”
সদর উপজেলার ৬ নং রামনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নেছারুল ইসলাম জানান, “ভূমিসেবা নিতে আসা গ্রাহকরা ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।”
নীলফামারী সদরের ৫ নং টুপামারি ইউনিয়নের সেবা গ্রহীতা মোখলেছুর রহমান অভিযোগ করেন, “আগে একদিনেই অনলাইনে আবেদন ও সনদ পাওয়া যেত। এখন অনেক সময় দুই-তিন দিন লেগে যাচ্ছে। ভর্তি ফরম ও চাকরির আবেদন জমা দিতেও শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়ছে।”
ডোমার উপজেলার ৭ নং বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের এক সেবা গ্রহীতা বলেন, “সকাল ১০টা থেকে বসে আছি জন্মসনদ সংশোধনের জন্য। এখন বিকেল ৩টা, তবুও কাজ শেষ হয়নি। উদ্যোক্তা মোবাইল ডেটা দিয়ে কাজ করছেন। সার্ভার ঠিক হলে এই ভোগান্তি কমবে।”
সংশ্লিষ্টদের মতে, রাস্তা সংস্কারের সময় অসতর্কভাবে ফাইবার অপটিক তার কেটে ফেলার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং মেরামতে দীর্ঘ সময় লাগে।
সদর উপজেলার ৪ নং পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহীম তালুকদার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সার্ভার নষ্ট থাকায় সেবা নিতে আসা মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সচল করা হলে উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।”
নীলফামারী স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন,
“ডিজিটাল সেবার গতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত সমাধান হবে।”
বিটিসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম বিষু চন্দ্র রায় জানান, “রক্ষণাবেক্ষণ ও তার মেরামতের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। সার্ভার সচল করে পূর্ণ সক্ষমতায় সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।”
বর্তমানে জেলার ৩০টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ১২ লাখ মানুষ এই সংযোগের আওতায় থাকলেও কার্যকর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে নষ্ট ফাইবার হোম মেরামত করে ডিজিটাল সেবা সচল করা হোক।