১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সরকারি সিলিন্ডার অবৈধ ব্যবহারের মূল হোতা জসিমের খুঁটির জোর কোথায় ?

তোফাজ্জল হোসেন শিহাব, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি:

২৫০ শয্যার মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক জসিমের বিরুদ্ধে সরকারি অক্সিজন সিলিন্ডার কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক হয়ে তার ব্যাক্তিগত অ্যাম্বুলেন্সে সরকারি সিলিন্ডার ব্যবহার যেন নিত্যদিনের ঘটনা এখানে।

সরেজমিনে গত রোববার সকাল সাড়ে ৯ টায় জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকার পরেও তার ব্যাক্তিগত গাড়ি ‘জারিয়া ‘ তে করে রোগী ঢাকা পাঠানো হচ্ছে। আর সে গাড়িতেই সরকারি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখা গেছে। তাৎক্ষণিক চালক জসিমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি।

সরকারি অক্সিজেন সিলিন্ডার অবৈধভাবে নিজের গাড়িতে বহন এবং বিক্রির অভিযোগে এখন তুমুল আলোচনায় চালক জসিম। সিলিন্ডারগুলো কীভাবে তার গাড়িতে এলো—তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়ার লিখিত নীয়ম থাকলেও স্টোরকিপার ওবায়দুল্লাহ কে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে আসছে জসিম। স্টোরকিপার দায়িত্বে থাকার পরেও কি করে সিলিন্ডার জসিম নিয়ে যায়, তা নিয়ে সন্দেহের তীর স্টোরকিপার ওবায়দুল্লাহর দিকে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলেই বেড়িয়ে আসবে থলের বেড়াল।

এ বিষয়ে স্টোরকিপার ওবায়দুল্লাহ জানান, চালক – মনির ও জসিম কোন প্রকার লিখিত ছাড়াই অক্সিজন সিলিন্ডার নিয়ে যেত। আমি বললেও শুনতো না।

সুত্রে জানা যায়, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক জসিম ২০১২ সালে হাসপাতালে যোগদান করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার রামরাজত্ব। স্টোরকিপার থাকার পরেও কোন নীয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে নিজের চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে আসছেন নিজের প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে। নতুন ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে জসিম সিলিন্ডার মজুদ রাখতো নিয়মিতই । পাশাপাশি একই সিলিন্ডার অন্যান্য প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

চালক জসিমের বিরুদ্ধে এত অনিয়ম -অভিযোগ থাকার পরেও এখনো তিনি বহাল তবিয়তে। এখানেই শেষ নয়, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট বানিজ্য করে আরেক অ্যাম্বুলেন্স চালক মনিরও রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। তিনিও মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক। যিনি গত মাসে অবসরে চলে যান।

তাদের দুজনের ২ যুগের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট বানিজ্য নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছিল গত বছর। প্রতিবেদনের সুত্র ধরে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে তাদের অন্যত্র বদলি করা হয়।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্বাস্থ্য বিভাগের বদলির আদেশ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাইকোর্ট রীট করে সেই দুই চালক। ৬ মাস বদলির আদেশ স্থগিত করে পূনরায় এখানেই যোগদান করে তারা। সম্রতি মনির অবসরে চলে যায়।

সুশিল সমাজের নাগরিকরা বলছেন, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কি এমন রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের বদলির আদেশ হওয়ার পরও হাইকোর্ট রীট করে এখানেই থাকতে হবে। তাদের রামরাজত্ব বন্ধ করে বদলি নয়, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের জোর দাবি জানাই।

একই সাথে তাদের যোগদানের পর থেকে অদ্যবদি জেনারেল হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডারের অবৈধ ব্যবহার, ও এর পরিমান নিয়ে তদন্তের অনুরোধ জানাই স্বাস্থ্য বিভাগ কে।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তত্বাবধায়ক ডা আহমেদ কবীর জানান, বিষয়গুলো আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্টোরকিপার কে। চালক জসিমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top