নিজস্ব প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ওয়াহিদুর রহমান মজুমদারের একটি বিতর্কিত বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভোটাধিকার নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সংলাপ ও সংস্কারের দাবি জোরালো হওয়ার প্রেক্ষাপটে তার এই মন্তব্যকে অনেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন ও গণতন্ত্রবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সম্প্রতি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় ওয়াহিদুর রহমান বলেন, “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব—এটা আমরা পরিবর্তন করতে চাই। চৌদ্দগ্রামে এই স্লোগান আর বাস্তবায়ন হতে দেব না। এখন থেকে স্লোগান হবে: ‘আমার ভোট আমি দেব, বিএনপিকে দেব… ধানের শীষে দেব।’ এই স্লোগানই আপনারা দেবেন। অন্য কোনো স্লোগানের সুযোগ নেই।”
বৃহস্পতিবার তার এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি করে। নেটিজেনরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক ভোটাধিকারের মূলনীতির সঙ্গে এই বক্তব্যের সাংঘর্ষিক। অনেকের মতে, এটি একটি দলীয় নেতার “ফ্যাসিবাদী মানসিকতা” এর প্রকাশ, যা বিএনপির গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্ব এই বক্তব্য নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলীয় নেতা জানান, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসলেও ওয়াহিদুর রহমানের এই মন্তব্য দলীয় নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা এটিকে তার “ব্যক্তিগত মত” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে ওয়াহিদুর রহমানের ফোন বন্ধ থাকায় তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. কামরুল হুদা ধারণা করেন, তিনি “আবেগতাড়িত হয়েই এমন কথা বলেছেন।” অন্যদিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন স্পষ্ট করে বলেন, “বিএনপি সর্বদা জনগণের ভোটাধিকারের পক্ষে। এই মন্তব্য দলের নীতিবিরুদ্ধ, এবং আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
এই ঘটনা জাতীয় পর্যায়েও প্রশ্ন তুলেছে—দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে নেতাদের ব্যক্তিগত বক্তব্য কীভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য দলীয় নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে এবং ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।