আদিব হাসান প্রান্ত, সিকৃবি প্রতিনিধি:
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের প্রথমবারের মতো পুরোনো প্রথা ভেঙে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হলো ছাত্র সমিতির নেতৃত্ব। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষদ ভবনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ শেষে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ভোটের আগের রাতজুড়ে প্রার্থীদের সজাগ প্রচারণা, বন্ধুদের কাছে ভোট চাওয়া এবং ফলাফলের অপেক্ষার টানটান উত্তেজনায় জমে ওঠে অনুষদ চত্বর।
নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন উক্ত অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুক্তারুন ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) হয়েছেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. নাহিদ আল মাহমুদ এবং কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন ড. ফাহমিদা ইসহাক। তৃতীয় বর্ষের মো. শাদমান সাদাত প্যানেল ভাইস প্রেসিডেন্ট, তানভীর আহমেদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় বর্ষের এস. এ. এম. সাইখ সিনা শ্রাবন হয়েছেন গ্রন্থাগার, প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক; মো. সাদিকুল ইসলাম হয়েছেন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক। সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন রিয়াদ আহমেদ, এবং ইবনে রাফিত বিন রাইয়ান।
সাধারণ সম্পাদক মো. নাহিদ আল মাহমুদ নির্বাচিত হওয়ায় শিক্ষক, সহপাঠী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “আমি সর্বদা অনুষদ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কেউ পুরোনো প্রথা ফিরিয়ে আনতে চাইলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।”। কোনো মহল যদি আগের প্রথা ফিরিয়ে আনতে চায়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ভিপি মাহির হোসেন বলেন, “প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রথাগত ধারণাকে ভেঙে দিয়ে একটি নতুন পথ তৈরি করার জন্য। গত কয়েক দশকে ছাত্র সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়ে, বড় ভাই বা প্যানেলিজমের মাধ্যমে সিলেকশন হতো। বড় ভাই বা প্যানেল আগে থেকেই ঠিক করে দিতো কে যাবে সমিতিতে। প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা সত্ত্বেও বড় ভাইদের চাপের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো না যোগ্য নেতৃত্ব। এই বিজয় প্রমাণ করে, আমরা পরিবর্তন চাই, আমরা চাই এমন একটি নেতৃত্ব যা সত্যিই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। কেউ যদি আগের কালচার ফিরিয়ে আনতে চায়, তাহলে প্রশাসনকে অনুরোধ করব যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, এমনকি ছাত্রত্ব বাতিলের জন্যও অনুরোধ করব। এই ভিপি পদটি কোনো ক্ষমতা বা প্রতিপত্তির জায়গা নয়, বরং এটি আপনাদের সেবা করার একটি সুযোগ। আমি আপনাদের সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই, যাতে আমরা আমাদের অনুষদকে একটি উন্নত ও আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারি।”
সভাপতি প্রফেসর ড. মুক্তারুন ইসলাম বলেন, “উৎসবমুখর পরিবেশের মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছে। একেক লেভেলের ফলাফলের উত্তেজনা ছিল একেক রকম, যা সত্যিই আনন্দদায়ক। আমি এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিটি, সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বড় ভাই বা প্যানেল থেকে যে সিলেকশন করা বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে বাধ্য করলে, প্রমাণ সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আশা করি, আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অনুষদকে আরও গতিশীল ও উদ্ভাবনীমুখী করে গড়ে তুলব। এই নতুন ছাত্র সমিতি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবে এবং কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সকলের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করছি।”
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, প্রথা ভেঙে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুধু নেতৃত্ব নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেনি, বরং ভবিষ্যতে একাডেমিক ও সাংগঠনিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।