নিজস্ব প্রতিনিধি:
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বাহিনীকে ইতিমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেড় ঘণ্টাব্যাপী প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং দেশের বিভিন্ন সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে বাহিনীর শৃঙ্খলা, সততা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো, সেনাবাহিনী ইস্যুতে বিভিন্ন মন্তব্যের জবাব এবং মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে সেনাসদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন, যা আগে কখনো এত দীর্ঘ সময়ের জন্য করতে হয়নি। তাই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং কোনো দূরত্ব থাকলে তা দূর করতে হবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইদানীং বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। এসব দেখে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়। সতর্ক থাকতে হবে যাতে কেউ ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না পারে।”
সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।”
সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিভিন্ন কটূক্তির বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “এসব মন্তব্যে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তাদের বয়স কম। তারা আমাদের সন্তানের বয়সি। তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে এবং তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারি দেখাতে হবে এবং প্রতিশোধমূলক কোনো কাজে জড়ানো যাবে না।”
নাম উল্লেখ না করে সেনাপ্রধান জানান, একজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না।” আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।
সেনাপ্রধান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “একজন সেনা কর্মকর্তাকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে সে বিষয়ে আগেভাগেই খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।”
গত ২১ মে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জানিয়েছিলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। এবারও তিনি নির্বাচন সম্পর্কে তার একই অবস্থান বজায় রেখেছেন।