মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
একটি ছোট্ট সেতু, যেটি স্থাপন হলে বদলে যেতো পুরো এলাকার চালচিত্র। বন্ধ হতো দীর্ঘদিনের পুরোনো কষ্ট, দূর হতো চরম থেকে চরমতম দুর্ভোগ, আর সহজ হতো চিকিৎসাসেবা, পড়াশোনা ও হাটবাজারে যাতায়াত ব্যবস্থা। অথচ সেই সেতুর অভাবে আজও রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১০ গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ আটকে রয়েছেন জীবন সংগ্রামে।
পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা হিরু মোল্লার ঘাটে একটি সেতুর দাবি অনেক দিনের পুরোনো। অথচ আজও সেই দাবির কোনো বাস্তবায়ন নেই কর্তৃপক্ষের। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখনো খেয়া নৌকা—তা-ও যদি পাওয়া যায় সময় মতো ! কখনো আধা ঘণ্টা, কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় এই খেয়া ঘাটে। বাঁশের তৈরি মাচালি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে কেউ কেউ আবার পড়েও যান।
চরাঞ্চলের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড় হন এই নদী। একবার খেয়া মিস করলে দেরি হয় স্কুলে, মিস হয় প্রাইভেট ক্লাস বা পরীক্ষাও। সাথী আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, “অনেক সময় পরীক্ষা মিস হওয়ার ভয় নিয়ে নদী পাড় হই। আবার বৃষ্টি হলে তো আর কথাই নেই।”
চরের কৃষক হযরত আলী হতাশা নিয়ে বলেন, “আমার উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে গেলে সময়মতো পৌঁছানো যায় না, দামও পাওয়া যায় না। কখনো ফসল পানিতে পড়ে যায়। একটা ব্রিজ আমাদের চাষাবাদকেই বাঁচাতে পারতো।”
আলাল একজন ঘোড়ার গাড়ির চালক। যাত্রী বা মালামাল নিয়ে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যাওয়ার জন্য তাকে ঘোড়া নিয়ে সাঁতরে নদী পাড় হতে হয়। “ভয় তো থাকেই, আয়ও কমে গেছে” বললেন তিনি মনে অনেক কষ্ট নিয়ে।
গৃহবধূ আনিকা খাতুন বলেন, “সন্তানকে নিয়ে খেয়া ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে কতবার ভিজে গেছি হিসাব নেই। একটু অসুস্থ হলেই বিপদ। খেয়া না পেলে ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা এসে সেতুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, কিন্তু পরে কেউ আর ফিরে তাকান না। অথচ একটি সেতুই তাদের জীবনধারাকে বদলে দিতে পারে।
রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসিনা পারভীন নিলুফা আমার বাংলাদেশকে বলেন, “হিরু মোল্লার ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ হলে চরের মানুষগুলো কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব দিক থেকেই উপকৃত হবেন। আমরা চেষ্টা করছি এটি বাস্তবায়নের জন্য।”
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহুয়া আফরোজ আমার বাংলাদেশকে বলেন, দুইবার নকশা চেঞ্জ করাতে কাজ টা একটু পিছিয়ে গেছে, আবার এখন তো বর্ষার সময়, ওখানে প্রচুর পানি তাই কাজ শুরু করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, শুষ্ক মৌসুম এলেই খুব দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।