২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

হত্যা মামলার আসামী হয়েও বহাল বালিয়াকান্দি উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটও বটে !

আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান। হত্যা মামলার আসামী হয়েও বহাল তবিয়তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয় ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সহ সার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোকজ করলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নেই কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ।

জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন গত ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জামানের প্যানেল বিজয়ী হয়। এ নিয়ে কৃষি কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন দুপুরে গোহাইলবাড়ী-চরদৈতরকাঠি এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী মোহাম্মদ মোস্তফা জামান সিদ্দিক এবং আরিফুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে উপজেলার চরদৈত্যকাঠি গ্রামের হাসেম মোল্লার ছেলে আকিদুল মোল্লা (৪৬) ও একই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে খায়রুল ইসলাম মিন্টু (৪৫) নিহত হন।

এ বিষয়ে মামলা দায়ের হয়। মামলার পর আরিফুর রহমান ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর বদলী হয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এখানে যোগদান করে তিনি ২০২৪ সালের ১৩ জানুয়ারী বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাওনারা বাজারে বিভিন্ন সার ও কীটনাশকের দোকানে ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে অবৈধভাবে অভিযান পরিচালনা ও জরিমানা আদায় করেন। গত ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী ভূয়া ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদাবাজি করা দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ায় কেন নিয়মিত মামলা দায়েরসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না জানতে চেয়ে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেন, তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হাসিবুল হাসান। তবে এ বিষয়ে আর কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

কয়েকজন সার ব্যবসায়ী বলেন, বালিয়াকান্দি কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে টাকা দাবী করে। সারের লাইসেন্স নিতে গেলে তাকে মোটা অংকের অর্থ দিতে হয়। এতে হয়রানীর শিকার হতে হয়।

বালিয়াকান্দি উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই হত্যা মামলায় আমাকে আসামী করা হয়। পিবিআই তদন্ত করে আমাকে চার্জশীর্ট থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আর বাওনারা বাজারে মোবাইল কোর্টের যে বিষয়টি অভিযোগ আনা হয়, আমি আসলে ডেটঅভার ঔষধ নষ্ট করি। কোন টাকা নেইনি। সারের লাইসেন্সের কোন কাজ করি না, তাই টাকাও নেয়নি।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার বিষয়ে আমার জানা নেই। অফিসিয়াল ভাবে কেউ কোন অভিযোগও করেনি। তবে, ভূয়া ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটা আগে হয়েছিল। আর সারের লাইসেন্সের টাকা গ্রহণের বিষয়টি কেউ অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত নই। আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ফয়েজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা ও ভূয়া ম্যাজিষ্ট্রেট সেজে আদালত পরিচালনার বিষয়টি কেউ অবগত করেনি। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top