মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
একসময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর হিসেবে খ্যাত ছিল নীলফামারীর ডোমার। দেশের নানা প্রান্তে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে এ অঞ্চল ছিল নির্ভরযোগ্য পথ। অথচ স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার হলেও এবং তিন দশক আগে টার্মিনালের জন্য সরকারি জমি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও আজও ডোমারে গড়ে ওঠেনি একটি স্থায়ী বাস টার্মিনাল।
এতে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। বর্ষার মৌসুমে এ ভোগান্তি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অস্থায়ী টার্মিনাল কর্দমাক্ত হয়ে যায়, তৈরি হয় খানাখন্দ আর জলাবদ্ধতা। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে কিংবা কাদা-মাটি মাড়িয়ে বাসে উঠতে হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন দশক আগে বাস টার্মিনালের জন্য সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত চারটি দাগে ১.১৩ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেখানে একটি স্থায়ী ভবনও নির্মাণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপড়েন ও প্রভাবশালী মহলের স্বার্থের দ্বন্দ্বে ভবনটি কখনো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে সংস্কারের অভাবে ভবনটি এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম।
এদিকে বরাদ্দকৃত জমি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী মহল। ফলে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা ভাড়া জায়গায় অস্থায়ী টার্মিনাল চালাচ্ছেন। এতে পৌর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডোমার উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থায়ী টার্মিনালের দাবি জানিয়ে আসছি। রাজনৈতিক কোন্দল ও প্রভাবশালীদের স্বার্থের কারণে কাজ হচ্ছে না। এতে শ্রমিক থেকে যাত্রী—সবারই দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে।”
কাদা-পানিতে ভোগান্তির বিষয়ে আব্দুল জব্বার নামে এক যাত্রী বলেন, “প্রতিদিন কাদা-পানিতে ভিজে বাসে উঠতে হয়। বৃষ্টির দিনে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। অথচ সরকারি জমি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কেন টার্মিনাল হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
ডোমার পৌর প্রশাসক শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বাস টার্মিনাল প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। বরাদ্দকৃত জায়গায় স্থায়ী টার্মিনাল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পরিবহন মালিকদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনা চলছে।”
সংশ্লিষ্টদের মতে, ডোমারে একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ হলে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। যাত্রীদের জন্য তৈরি হবে নিরাপদ পরিবেশ, শ্রমিকরাও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে দীর্ঘ তিন দশক পরও সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে স্থানীয়দের মনে।