২৮শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

টাঙ্গাইলের এএসআই মান্নানের শতকোটি টাকার সম্পদ: তদন্তের দাবি স্থানীয়দের

নিজস্ব প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাশি গ্রামের পুলিশ সদস্য এএসআই রাশেদুজ্জামান মান্নানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে কর্মরত এই এএসআই গত কয়েক বছরে এলেঙ্গা পৌরসভাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫০০ শতাংশ জমি কিনেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। এসব জমির বাজারমূল্য শতকোটি টাকার উপরে। এই টাকার উৎস জানতে দুদক, পুলিশ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মান্নানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নত আলী এক সময় অতি দারিদ্র্যের সঙ্গে সংসার চালাতেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি পাওয়া মান্নান পুলিশে যোগদানের পর থেকে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তার বোন ও জামাইয়ের নামেও ব্যাংক হিসাব খুলে অবৈধ আয়ের টাকা জমা রাখার  অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এলেঙ্গা গরুর হাটের পাশে ১৫.৭ শতাংশ জমির উপর সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে-‘জমি বিক্রি করা হবে। যোগাযোগ মান্নান পুলিশ।’ স্থানীয় ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, এই জমিটি মান্নান পুলিশ কয়েক বছর আগে কিনেছেন। বর্তমানে এখানে ১২ লাখ টাকা শতাংশ জমি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এলেঙ্গা মুরগির হাটের মান্নানের দোকানের ভাড়াটিয়া মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, আমি এখানে ভুসির ব্যবসা করছি। এই মার্কেটে বর্তমানে ২০ লাখ টাকার নিচে কোনো দোকান নেই। এলেঙ্গা হাইস্কুলের পাশে মান্নানের বাসার ভাড়াটিয়া শিউলি বেগম বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে দুটি পরিবার এই বাসায় ভাড়া থাকি। এ বাসায় আট শতাংশ জায়গা রয়েছে। এই এলাকায় জমির মূল্য প্রতি শতাংশ সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা। এলেঙ্গা দক্ষিণপাড়ার এলাকায় দোকানসহ ১২ শতাংশ জমি রয়েছে মান্নানের নামে। এছাড়াও পাশের মুরগির হাটের পাশে এক শাটারের একটি দোকান কিনেছেন ২০ লাখ টাকা দিয়ে।

স্থানীয় শমসের আলী বলেন, এই পৌর এলাকায় ১০ লাখ টাকার নিচে কোনো জমি নেই। আর বাড়ির জমি কিনলে ১৫ লাখ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। বাশি এলাকার কলেজছাত্র আকরাম হোসাইন ও সোহেল রানা বলেন, আব্দুল মান্নান এলাকার মানুষের সঙ্গে তেমন ভালো আচরণ করেন না। তিনি মানুষকে বলেন, তিনি বিএমডব্লিউ নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করবেন। পুলিশের নাম ব্যবহার করে আব্দুল মান্নান এলাকায় প্রভাব খাটান বলেও অভিযোগ উঠেছে। একই গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, আমার কাছ থেকে মান্নান ৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে ১০ শতাংশ জমি দখল করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছেন। এ নিয়ে কিছু বললেই পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেন। আব্দুল মান্নান আমাদের গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ, ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ৫ শতাংশ, ছপ্পর মণ্ডলের কাছ থেকে ৯ শতাংশ, ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে ১০ শতাংশ, আজিজের কাছ থেকে ৫ শতাংশ, মোরসেম মিয়ার কাছ থেকে ৫ শতাংশ জমি কিনেছেন।

বাশি এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগেও মান্নান পুলিশ হালিমের ২৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। যার বাজারমূল্য প্রতি শতাংশ প্রায় ৫ লাখ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বাশি গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আব্দুল মান্নান অন্তত ৫০০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এসব জমির বাজারমূল্য শতকোটি টাকার উপরে। এই টাকার উৎস কোথায়। দুদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করার দাবি জানাই আমরা।

পুলিশ সদস্য রাশেদুজ্জামান মান্নান বলেন, আমার বেতন দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। আমার নামে কোনো সম্পত্তি নেই। আমার নামে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top