কামরান হাশেমী:
মানবজাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত ঘটনা হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)-এর জন্ম। আল্লাহ তাআলা সমগ্র বিশ্বজগতকে তাঁর আগমনে মর্যাদা দান করেছেন এবং তাঁকে উৎকৃষ্ট চরিত্র দ্বারা বিশেষভাবে ভূষিত করেছেন। কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে—“তোমাদের নিকট এমন এক রাসূল আগমন করেছেন, যিনি তোমাদের মধ্য থেকেই। তোমাদের কষ্ট তাঁর জন্য কঠিন, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, আর মুমিনদের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল ও দয়ালু।” (সূরা আত-তাওবা: ১২৮)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) মানবতার জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর জন্মের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বিরাট অনুগ্রহ করেছেন যখন তিনি তাদের মধ্য থেকেই এক রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা এর আগে ছিল স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে।”
ইতিহাসে বর্ণিত আছে, ১২ রবিউল আউয়াল রাতে নবীজির জন্মের মুহূর্তে বহু আশ্চর্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। পারস্য সম্রাট কিসরার প্রাসাদের ১৪টি শিখর ভেঙে পড়ে, বহু শতাব্দী ধরে জ্বলতে থাকা অগ্নিমন্দিরের আগুন নিভে যায় এবং সাওয়া হ্রদ শুকিয়ে যায়। সেই রাতের নূর পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করে দেয়। কুরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আনন্দিত হতে। আল্লাহ বলেন, “বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতের কারণে—তাতেই তারা আনন্দিত হোক। সেটাই তাদের সবকিছুর চেয়ে উত্তম।” (সূরা ইউনুস: ৫৮)। তাই নবীজির জন্মে আনন্দ প্রকাশ কুরআনের নির্দেশিত শিক্ষারই অংশ।
প্রখ্যাত আলিম ইমাম শিহাবুদ্দীন কস্তালানী (রহ.) নবীজির জন্মরাতকে শবে কদরের থেকেও শ্রেষ্ঠ বলেছেন। তাঁর মতে জন্মরাত শ্রেষ্ঠ কারণ এই রাতে বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতা রাসূলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। আর শবে কদর হলো তাঁর প্রতি অনুদান প্রাপ্তির রাত। শবে কদরে ফেরেশতারা অবতীর্ণ হন, কিন্তু জন্মরাতে তিনি সা. নিজেই অবতীর্ণ হন। শবে কদর মুসলিম উম্মতের জন্য অনুগ্রহ, আর জন্মরাত সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিনে তাঁর দাসী সুথাইবা তাঁকে শুভ সংবাদ দিলে কাফির আবু লাহাব তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়। মৃত্যুর পর প্রতি সোমবার তার আজাব কিছুটা লাঘব হয়। আলিমরা বলেন, যখন একজন কাফির কেবল জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করার কারণে কিছুটা মুক্তি পায়, তখন একজন ঈমানদার মুসলিম নবীজির জন্মে আনন্দ প্রকাশ করলে তার জন্য পুরস্কার কত মহৎ হবে!
তাই মুসলমানদের জন্য মিলাদুন্নবী শুধু একটি উৎসব নয়, বরং ঈদের ঈদ। কারণ যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) না থাকতেন, তবে ঈদ, দিন-রাত, আসমান-জমিন—কিছুই অস্তিত্ব পেত না। সবকিছুই হয়েছে তাঁর বরকতের মাধ্যমেই।
মুসলমানদের উচিত এই দিনকে ইবাদত, দোআ ও আনন্দের মাধ্যমে স্মরণ করা এবং নবীজির প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের নবীজির জন্মের বরকতে রহমত, ভালোবাসা ও নেক আমল দ্বারা সমৃদ্ধ করেন, আমাদের অন্তরকে তাঁর প্রেমে পূর্ণ করেন এবং আমাদের জীবনকে কল্যাণময় করেন।
শিক্ষার্থী: আল-আযহার ইউনিভার্সিটি, কায়রো, মিশর