নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের পারকী সমুদ্রসৈকতের পাশে ৭২ একর জায়গাজুড়ে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ‘রাজকীয় অতিথিশালা’। এখানে রয়েছে ৩০টি ভিআইপি বাংলো, ৪৮ ইউনিটের মোটেল মেস, কনভেনশন সেন্টার, রিসোর্ট রিসিপশন ভবন, রেস্তোরাঁ, দোকান, জিম, অফিস, কনফারেন্স কক্ষ, জাদুঘর, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। তবে উদ্বোধনের পর বছর পেরিয়ে গেলেও অতিথিশালাটি চালু হয়নি। অথচ প্রতি মাসে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ সরকারকে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অবস্থাও একই। দুই বছর আগে উদ্বোধন হলেও কোনো কার্যক্রম হয়নি। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও স্টাফদের বেতনের নামে গুনতে হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। অপরিকল্পিত এই প্রকল্পগুলো এখন লোকসানের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেহেরপুরে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল ভবনও ব্যবহার না হয়ে পড়ে আছে। ২০২৩ সালে উদ্বোধন হলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি। নাটোর, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহু স্থাপনা তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রায় ১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অডিটোরিয়াম ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দেওয়ালের রং উঠে যাচ্ছে, আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রভাবশালী রাজনীতিকরা।
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল কাম ট্রেনিং সেন্টার পাঁচ বছর ধরে তালাবদ্ধ। প্রশিক্ষণের জন্য কেনা কোটি টাকার সরঞ্জাম ধুলোয় ঢেকে গেছে। নাটোরের বড়াইগ্রামে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিপণিবিতান তিন বছর ধরে বন্ধ, যা এখন কুকুর-বিড়ালের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়ায় ১১ কোটি টাকার আধুনিক কিচেন মার্কেটও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, পানছড়ি ও মানিকছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত তিনটি ছাত্রাবাস ১৪ বছরেও চালু হয়নি। ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব ছাত্রাবাসে ৮০ জন করে শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা থাকলেও জনবল সংকটের অজুহাতে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে পাহাড়ের শত শত শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—এত কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামো যদি ব্যবহার না হয়, তবে কার স্বার্থে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছিল? দুর্নীতি আর অপচয়ের সাক্ষী হয়ে এখন এসব স্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র, চুরি হচ্ছে দরজা-জানালা। সরকারি অর্থের অপব্যবহারের এমন চিত্রে জনগণের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।