জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী( পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
লোহার খাঁচায় বন্দি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের গর্ব দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু। সেতুতে লোহার গ্রিল বসানোর ফলে নান্দনিক সৌন্দর্য হারানোয় দর্শনার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে । নিরাপত্তা জনিত কারনে সেতুটির দুই পাশে উঁচু কংক্রিটের প্রাচীরের ওপর লাগানো হয়েছে লোহার গ্রিল, যা দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও হতাশা। অনেকের মতে, এটি এখন দেখতে কারাগারের মত মনে হচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। চার লেনের এই সেতুটি হয়ে ওঠেছিল একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকেলে ও ছুটির দিনে হাজারো মানুষ এখানে ভিড় জমিয়ে নদীর দৃশ্য উপভোগ করতো। গ্রিল বসানোর ফলে সেতু থেকে নদীর দৃশ্য উপভোগ করতে পারছেনা দর্শনার্থীরা।স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি চালু হওয়ার পর থেকে এখানে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে সেতুর দুই পাশে লোহার গ্রিল বসানো শুরু করেছে। বরিশাল অংশের ৪৬৩ মিটার এরইমধ্যে এই গ্রিল বসানো হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া বলেন, ডিজাইনের সঙ্গে মানানসই কোনো বিকল্প কাঠামো তৈরি করা যেত, যা সেতুর সৌন্দর্য অটুট রাখত।
লেবুখালী পায়রা পয়েন্ট এর ব্যবসায়ী দুলাল মুনসী বলেন, গ্রিল বসানোর সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতির ওপর। সেতুর দুই পাড়ে গড়ে ওঠা চা-নাস্তার দোকান, ফুচকা ও ডাবের পানির বিক্রেতারা ইতোমধ্যে বেচাকেনা কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। দর্শনার্থীরাও এখন আগের মতো জড়ো হচ্ছে না এবং বেশি সময় থাকছে না।কলেজছাত্রী রুজিনা আক্তার বলেন, আগে মনে হতো আকাশের নিচে নদীর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। এখন মনে হয় যেন কারাগারের ভেতর আছি।স্থানীয় বাসিন্দা মো: কবির হোসেন বলেন, এটা শুধু একটা সেতু নয়, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। নিরাপত্তা যেমন দরকার, তেমনি সৌন্দর্যেরও মর্যাদা আছে।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার জাহিদ নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, তরুণদের কেউ কেউ ছবি তুলতে গিয়ে সেতুর মাঝ বরাবর চলে আসেন, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তবে তিনি এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।সড়ক ও জনপথ বিভাগ পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল হোসেন জানান, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই গ্রিল বসানো হচ্ছে। তবে সেতুর অবশিষ্ট এক হাজার মিটার অংশে কবে নাগাদ গ্রিল বসানো হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।।