নিজস্ব প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আরও এক বছর বাড়িয়ে ৩৩ বছর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছিল, তাতে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সেই গেজেটে নানা অসঙ্গতি ও অস্পষ্টতা থাকায় নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান গেজেটের কারণে অনেক পদে বেশি বয়সে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্যও কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এসব সমস্যা দূর করতেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সংশোধনের প্রস্তাব করছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যেকোনো দিন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও পুরুষদের জন্য বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছিল। তবে আপাতত বয়সসীমা ৩৩ বছরে নির্ধারণ করার চিন্তা চলছে।
সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রিন্সিপালসহ কিছু পদে দীর্ঘদিন ধরে বেশি বয়সে নিয়োগের বিধান ছিল। কিন্তু গত বছরের গেজেটে এসব স্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। একইভাবে কম্পিউটার পারসোনেল নিয়োগের ক্ষেত্রেও (যেমন সহকারী প্রোগ্রামার, প্রোগ্রামার, সিস্টেম ম্যানেজার, সিনিয়র প্রোগ্রামার, সিস্টেম এনালিস্ট ইত্যাদি) বয়সসীমার কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় চাকরিপ্রত্যাশী ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ই সমস্যায় পড়ে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেছেন, গত বছরের অধ্যাদেশ সংশোধন না করলে জটিলতা আরও বাড়বে। তার মতে, ৩২ বছরের বেশি বয়সে যারা চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পেতেন, তারা ওই অধ্যাদেশের ফলে অযোগ্য হয়ে গেছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ অনুসারে সরকারি মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা ছিল ৪০, সহযোগী অধ্যাপকের জন্য ৪৫ এবং প্রিন্সিপালের জন্য ৫০ বছর। শিক্ষা ক্যাডারে সহযোগী অধ্যাপকের জন্য ৪৫ এবং বিভাগীয় প্রার্থীর জন্য ৫০ বছর বয়সসীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নতুন গেজেটে এসব উপেক্ষা করায় নিয়োগযোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়ে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি অফিসের কম্পিউটার পারসোনেল নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এ বিভিন্ন পদে বয়সসীমা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—যেমন উপ-পরিচালক ও সিস্টেম ম্যানেজার পদের জন্য ৪৫ বছর, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট ও মুখ্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলীর জন্য ৪৫ বছর, সিস্টেম এনালিস্ট ও সিনিয়র প্রোগ্রামারের জন্য ৪০ বছর এবং সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট, প্রোগ্রামার ও সুপারভাইজারের জন্য ৩৫ বছর। কিন্তু ৩২ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করায় এসব পদে অনেক প্রার্থী যোগ্যতা হারান।
সব দিক বিবেচনা করে সরকার এখন বয়সসীমা ৩৩ বছরে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ও বিভ্রান্তি কিছুটা হলেও কমবে।