১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

আদালতের মামলা উপেক্ষা করে চলছে প্রকাশ্যে উচ্ছেদ: রাজবাড়ীতে মায়ের সম্পত্তি বিক্রি করে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে ও পুত্রবধু

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

রাজবাড়ীর পাংশা পৌর শহরের মাগুড়াডাঙ্গী গ্রামে নিজের গর্ভধারিণী মায়ের সম্পত্তি বিক্রি ও নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছেলে খোন্দকার ফজলে রাব্বী সাগর ও পুত্রবধু শারমিন সুলতানা মুন্নির বিরুদ্ধে। একইসাথে প্রতারণার মাধ্যমে মায়ের সম্পত্তি দখলে রেখে তা জালিয়াতি করে বিক্রি করছে।

প্রভাবশালী ক্রেতারা প্রকাশ্যে দিবালোকে বসতবাড়ীর ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। ছেলে খোন্দকার ফজলে রাব্বী সাগরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও নির্যাতনে এখন ভুক্তভোগী মা ফিরোজা খোন্দকার দিশেহারা। আদালতে মামলা ও অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না।

জানা গেছে, পাংশা পৌরসভার মাগুড়াডাঙ্গী মৌজার এসএ ৩০ নং খতিয়ানে বিএস ৩২৮ নং খতিয়ান প্রস্তাবিত এবং আরএস ৪৯২ নং দাগ ও বিএস ৪১৪ নং দাগে বাড়িসহ ২ আনায় ৮৭ শতাংশ জমির মধ্যে পশ্চিমাংশের ৪৩.৫০ শতাংশ জমি প্রতারণার মাধ্যমে ছেলে খোন্দকার ফজলে রাব্বী ওরফে সাগর তার মা মোছাঃ ফিরোজা খোন্দকারের কাছ থেকে নিজের নামে করে নিয়েছেন। এ অভিযোগে রাজবাড়ীর জেলা জজ আদালতে ছেলে খোন্দকার ফজলে রাব্বী সাগরকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেছেন ফিরোজা খোন্দকার। এ মামলাটির পরবর্তী তারিখ আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর।

ফিরোজা খোন্দকার অভিযোগ করেন, তার ছেলে সাগর বিভিন্ন সময়ে এ জমি বিক্রির কথা বলে একাধিক মানুষের কাছ থেকে বায়না বাবদ টাকা নিয়েছেন। প্রথমে ৮ লক্ষ টাকা বায়না ফেরত দিলেও পরবর্তীতে অন্য এক ব্যক্তির কাছে বায়না করে টাকা নেন। দীর্ঘদিনেও জমি বিক্রি করতে না পারায় সেই বায়না বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে এক বিদেশ ফেরত ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রির চেষ্টা করে সাগর। সেখানে ব্যর্থ হয়ে পাংশা শহরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের নিকট ১০ কোটি টাকা মুল্যের বাড়ী দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করেছে বলে জানতে পেরেছি। যে জমির মালিকই নয়, তার কাছ থেকে জমি কিনে এখন আমাকেই বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করছে।

ফিরোজা খোন্দকার বলেন, “এ জমি আমার। আমি ছাড়া কেউ বিক্রি করতে পারবে না। আমার সাথে প্রতারণা করে জমির দলিল করেছে। আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। জেনে বুঝে যদি কেউ এ জমি কেনে, সে ঠকবে এবং কখনো জমি পাবে না।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাগরের স্ত্রী মুন্নি একজন প্রতারক এবং তার জমি ও সম্পদ ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। এর আগে তিনি মুন্নির একাধিক কাজে বাধা দেওয়ায় তার সাথে খারাপ ব্যবহার ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি, তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন বাড়ীতে থাকা ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী আবু সায়েম বলেন, আমার কাছে সাগরের স্ত্রী মুন্নি ৫টি ঘর সাড়ে ৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছে। তাই আমি লোকজন নিয়ে ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। জমিটি শুনেছি সবুজ সরদার ক্রয় করেছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারবো না।

এ ব্যাপারে খোন্দকার ফজলে রাব্বী ওরফে সাগরের স্ত্রী শারমিন সুলতানা মুন্নির বাড়ীতে গেলেও পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

খোন্দকার ফজলে রাব্বী ওরফে সাগরের সাথে কথা বলতে বাড়ীতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ফিরোজা খোন্দকারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মামলাটির শুনানি চলছে এবং তারা আদালতে ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আদালতে মামলা চলমান থাকাবস্থায় জমি বিক্রি করতে পারে না।

পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়। আদালত থেকে নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top