রবিউল ইসলাম বাবুল, রংপুর প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নিলামের আগেই সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে মাদ্রাসার গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা সুপার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই স্থানীয় জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের রইসবাগ কেরামতিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে কেরামতিয়া মাদ্রাসা সুপারের পক্ষ থেকে হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। যার তারিখ ১০-০৯-২৫ ইং। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মাদ্রাসার আঙ্গিনায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ ( ইউক্যালিপটাস কাঠাল, মেহগনি, শিলকড়াই প্রভৃতি) বিক্রির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল ১০টায় প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে আগ্রহীদের অগ্রিম ৫ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়ে বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডাকে অংশগ্রহন করতে বলা হয় এবং সর্বোচ্চ দরদাতাকে গাছ সরবরাহ করা হবে বলে ঐ চিঠিতে উল্লেখ করা হয।
কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো, নিলামের দিন না আসতেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মাদ্রাসার কয়েকটি বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সদ্য কাটা গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল কাদের বলেন, “নিলামের বিজ্ঞপ্তি আমরা নিজের চোখে দেখেছি। অথচ নিলামের আগেই রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পদের অপচয়।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় অভিভাবক আভিযোগ করে বলেন, “সুপার নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। নিলামে বিক্রি হলে যে টাকা পাওয়া যেতো, তা আর পাওয়া সম্ভব নয়।”
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে নিলাম প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন এবং সঠিক মূল্য নির্ধারণ ছাড়া গাছ কাটা বা বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু রইসবাগ কেরামতিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার নিলামের আগেই গাছ কেটে এই নিয়ম ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে মাদ্রাসা চত্বরে ছাত্র-শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে ধারণা করছেন, সুপার ব্যক্তিগত স্বার্থে গোপনে গাছ গুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।
সৃষ্ট ঘটনায় আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা হলে তিনি বলেন,বিষয়টি শুনেছি, তবে গাছ কাটা বা নিলামের ব্যাপারে বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউ,এন,ও) স্যারের বিষয়।
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত সুপারের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধান কান্তি হালদারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে আলোচনা হলে তিনি বলেন, এ বিষয় উপজেলায় মিটিং হয়েছে। নিলামের আগে গাছ কাটার বিষয়টি তিনি জানেন না। যদি মাদ্রাসা সুপার এমন কাজ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে জরুরী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেলা প্রশাসকের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী। তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।