জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
দিন চলে যায়, সময় হারিয়ে যায়, অতীতের অদৃশ্য গহ্বরে। তবে সে শুধু চলেই যায় না, রেখে যায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। যুগে যুগে পৃথিবীর একেক মহাদেশে গড়ে উঠেছে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতি।
তাই এক সময় যেমন গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুড়ি উড়ত, তেমনি শোভা পেত মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ফুলদানি, খেলনা ও ঘরের নানা সাজসজ্জার জিনিস। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্লাস্টিক-পোরসেলিন পণ্যের ভিড়ে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে এই মাটির ছোঁয়ায় গড়া ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।
মাটির জিনিস পত্র তৈরিতে ব্যস্ত নারী মৃৎ’অর্থ মাটি আর ‘শিল্প’শব্দের অর্থ সুন্দর, সৃষ্টিশীল বস্তু। তাই মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মকে ‘মৃৎশিল্প’ বলে। এবং যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বলা হয় কুমার। কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুক্কায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন। এই শিল্পটি হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম একটি শিল্প। যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে।
পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায়, মৃৎশিল্পের ইতিহাস শত শত বছরের। এক সময় এখানকার কুমারদের হাতে তৈরি মাটির জিনিস পত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। দুমকি,কলসকাঠি, বগা, বাউফল উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আগে বহু পরিবার পৈতৃকভাবে মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা নানা রকম নকশা ও আকৃতির মাটির জিনিসপত্র তৈরি করত।
এসব পণ্য স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁরা। এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে।আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। মাটির জিনিস পত্র বগার মৃৎশিল্পী বাবু রাম বলেন, “আগে হাটে নিয়ে গেলে সব পণ্য বিক্রি হয়ে যেত। এখন তো কেউ মাটির হাঁড়ি চায় না, সবাই চায় স্টিল বা প্লাস্টিক। তাই আগ্রহ কমে গেছে।”
মৃৎশিল্পীরা জানান, একদিকে কাঁচামাল ও জ্বালানি খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে নেই সরকারি কোনো সহায়তা। ফলে পেশা টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাদের সন্তানরাও এখন আর এই পেশায় আসতে চায় না।
দুমকিতে এখনও, কলসকাঠি,বগা, থেকে, কিছু ফেরি ওয়ালা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেচা বিক্রি করতে দেখা গেছে, ডাকনি,পাতির সহ অন্যন্য জিনিস পএ, দুমকি উপজেলার পিরতলা বাজারে, দুটি দোকানে এখনো হরেক রকমের জিনিষ পাওয়া যায়, হারুনের,ও খলিল মুনশির দোকানে, শিল্প ও কারুশিল্প সূত্রে জানা যায়, জেলার বেশ কিছু এলাকায় এখনো কিছু পরিবার মৃৎশিল্প ধরে রেখেছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চাই সরকারি উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ, সৃষ্টিশীল ডিজাইন, এবং অনলাইন বিপণনের সুযোগ সুবিধা যদি পাই।মাটির গন্ধ আর শিল্পীর ছোঁয়া মিশে থাকা এই ঐতিহ্য যেন চিরতরে হারিয়ে না যায় এটাই এখন সময়ের দাবি।