নিজস্ব প্রতিনিধি:
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নিয়ে দীর্ঘদিন ব্যস্ত ছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এতদিন তার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা চোখে পড়েনি। কিন্তু বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে পরিচিত এনায়েত করিম চৌধুরীর প্রভাবেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। জানা গেছে, এনায়েত করিম নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর গঠন ও পরিচালনায় অর্থায়ন করতেন এবং ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়মিত অর্থ সহায়তা দিতেন।
বুধবার ৪৮ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনতা পার্টির গঠন থেকে শুরু করে এর কার্যক্রমে এনায়েত করিম সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা আক্তার মোর্শেদ জানান, ইলিয়াস কাঞ্চন ও তার দলের সঙ্গে এনায়েতের যোগাযোগের সত্যতা মিলেছে। দল পরিচালনায় তিনি প্রতি মাসে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতেন। বাকি অর্থ নিজেই জোগাড় করতেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে ইলিয়াস কাঞ্চন বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম স্বীকার করেছেন, বর্তমান সরকারকে সরিয়ে নতুন জাতীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করার পর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। সেখানে তিনি সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক দলের নেতা ও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠক করেন। সেই সূত্রে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং তাকে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
গত ২৫ এপ্রিল ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ আত্মপ্রকাশ করে। দলটির স্লোগান “গড়ব মোরা ইনসাফের দেশ”। অভিযোগের বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সাবেক মহাসচিব লিটন এরশাদ জানান, ইলিয়াস কাঞ্চন বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, দুজন ডিআইজির সঙ্গে এনায়েত করিমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাদের মধ্যে একজন ৬ সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। অপর ডিআইজির সঙ্গে ঢাকায় বৈঠকও হয় তার। এছাড়া একজন প্রভাবশালী আমলার সঙ্গেও তার গভীর যোগাযোগ ছিল, যার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য দেড়শ কোটি টাকার চুক্তি হয়। তবে অর্থ লেনদেনের প্রমাণ এখনও মেলেনি।
এনায়েত করিমের সহযোগী মোস্তফা আজাদ, যিনি একাত্তর টিভির জিএম অপারেশন ছিলেন, গত ৫ আগস্ট চাকরি ছাড়েন। তাকে মাসিক দুই লাখ টাকা বেতনে সহকারী হিসেবে নিয়েছিলেন এনায়েত। মোস্তফার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন জায়গায় টাকা পাঠাতেন এবং গুলশানের বাড়ি ভাড়াও দিতেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়ায় সন্দেহজনকভাবে গাড়ি চালানোর সময় এনায়েত করিমকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে আদালতে তোলা হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড শেষে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। একই মামলায় বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া মোস্তফা আজাদকেও আদালতে তোলা হলে তারও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী জানান, এনায়েত করিমের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি আইফোনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানকার তথ্য অনুযায়ী তিনি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন এবং নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এনায়েত করিম বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, সরকারি-বেসরকারি নীতিনির্ধারকদের তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশি সংস্থায় পাঠাতেন। এনায়েত এবং তার সহযোগীরা দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।