মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
বিয়ের কেবল কয়েক মাসের সংসার জীবন। তারপর থেকেই অমানবিক নির্যাতন, অশান্তি আর অপমান। যৌতুকের জন্য স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে ১৩ বছর ধরে বাবার বাড়িতেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সমিতা রানী (৩২)। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও স্বামী রতন চন্দ্র রায় একবারও খোঁজ নেননি তার। কিন্তু তবুও স্বামীর সংসারে ফেরার আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বামনা-বামনী হরিসভাপাড়া গ্রামের। গ্রামের শ্রী রতন চন্দ্র রায়ের স্ত্রী সমিতা রানীর বিয়ে হয়েছিল প্রায় ১৩ বছর আগে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মেনেই ঘটা করে হয়েছিল বিয়ে। কিন্তু দাম্পত্য জীবনের সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
সমিতা জানান, তার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। তবুও বিয়ের সময় স্বামীর পরিবারকে দেড় লক্ষ টাকা ও নানা উপঢৌকন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও যৌতুকের জন্য চাপ অব্যাহত থাকে। বিয়ের অল্পদিনের মধ্যেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমাকে বেধরক মারধর করে বাড়ির পাশেই ফেলে রেখে যায়। বাবা-মা চিকিৎসা করান। আমি আবার স্বামীর সংসারে ফিরতে চাইলে তারা আমাকে ঘরে তোলে নাই। অথচ এই ১৩ বছরে স্বামী আমাকে একদিনও খোঁজ করেনি, একটা সিঁদুরের কৌটাও দেয়নি। এখন সে নতুন বিয়ে করে সুখে সংসার করছে।”
খুটামারা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার রহমান বলেন, “আমি সমিতার বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। বিয়ের সময় রতনের বাবাকে দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন থেকেই সমিতা বাবার বাড়িতেই অসহায় জীবন যাপন করছে।”
তবে এ বিষয়ে রতন চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হিন্দু ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী নারীদের দ্বিতীয়বার বিয়ে করার সুযোগ নেই। এ কারণে নতুন জীবন শুরু করতেও পারছেন না সমিতা। ফলে ১৩ বছর ধরে বাবার সংসারেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিষয়টি শুধুমাত্র পারিবারিক নয়, সামাজিকও বটে। যৌতুকের অভিশাপে একজন নারীর জীবন এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক। তারা প্রশাসন ও সমাজপতিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
১৩ বছরের এই অপেক্ষার অবসান কি হবে? সমিতা কি কোনোদিন স্বামীর সংসারে ফিরতে পারবেন, নাকি আজীবন বাবার ভরসাতেই বাকি জীবন কাটাতে বাধ্য হবেন? এমনি প্রশ্ন স্থানীয়দের।