নিজস্ব প্রতিনিধি:
সেপ্টেম্বর মাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও অক্টোবরে নতুন করে ষড়যন্ত্রে নেমেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী কুচক্রী মহল। প্রধান লক্ষ্য—যেকোনো মূল্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে হটানো এবং আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করা। এজন্য দেশি-বিদেশি দোসরদের সহায়তায় পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি শেষ চেষ্টা চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে গুপ্ত হামলা, চিহ্নিত অপরাধীদের সক্রিয় করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ঝটিকা মিছিলে বাধা দিলে পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভাঙা, এমনকি অল্প সময়ের মধ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বিপুল জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের মাস্টারপ্ল্যান সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও অ্যাকশন প্ল্যান হাতে পেয়েছে। জানা গেছে, ভারতের মাটিতে বসে একটি কোর গ্রুপ এই পুরো নাশকতা পরিচালনা করছে। তাদের নির্দেশনায় আত্মগোপনে থাকা হাজারো নেতাকর্মী প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছে। অনেককে গ্রেফতার করা গেলেও, ভেতরের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কিছু অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে আওয়ামীপন্থী সদস্যরা তথ্য পাচার করছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এ কারণে সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারির জন্য বিশেষ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, পুলিশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী সমর্থক কিছু কর্মকর্তা সক্রিয় ছিল। তবে এরা যাতে আর কোনো নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে না পারে সে বিষয়ে কড়া নজরদারি চলছে।
সূত্র বলছে, অক্টোবরে নাশকতা ঠেকাতে আগাম সতর্কবার্তা জারি করেছে সরকার। পুলিশের সাইবার ইউনিট জানিয়েছে, অনলাইনে বড় ধরনের মিছিল ও রাজধানী ঘেরাওয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রধান লক্ষ্য দ্রুত সময়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বিশাল জনসমাগম ঘটানো।
ডিএমপির একজন উপকমিশনার জানিয়েছেন, ২৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বড় সমাবেশ করার চেষ্টা করেছিল। পুলিশি তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয় এবং সেদিন ২৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া শেখ হাসিনার জন্মদিন ঘিরেও নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা পুলিশের সতর্কতায় রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ডিএমপি ও পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জরুরি মিটিং ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি একটি কোর গ্রুপ তথ্য বিশ্লেষণ ও অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়নে কাজ করছে, যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।