৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী

নিজস্ব প্রতিনিধি:

গত ১৫ বছরের দমননীতির কারণে জামায়াতে ইসলামী চরম সংকটে পড়েছিল। আওয়ামী সরকারের সময় দলটির স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অপপ্রচারের শিকার হতে হয়। তবে জুলাই বিপ্লবের পর স্বৈরাচারের পতনে দলটির নতুন করে উত্থান ঘটে। বর্তমানে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত আলোচনায় এসেছে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনরায় পেলে সরকার গঠনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে জামায়াত পুনরায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগী হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক, দূতাবাস-সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং বিদেশ সফরের মাধ্যমে দলটির নেতারা নিজেদের নীতি, কৌশল ও রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়। সংস্কার শেষে নতুনরূপে চালু হওয়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম বৈঠক হয় চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। এরপর ধারাবাহিকভাবে একের পর এক কূটনীতিক জামায়াত কার্যালয়ে আসেন এবং নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দলটির শীর্ষ নেতারাও বিভিন্ন দূতাবাস, কূটনীতিকের বাসভবন ও বিদেশ সফরে যোগ দিচ্ছেন।

এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ফ্রান্স, তুরস্ক, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিলসহ অন্তত ৪০টি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠক হয়েছে। তবে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। সর্বশেষ ব্রাজিল ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

দলটির নেতারা জানান, কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক অবস্থান, ভবিষ্যৎ নির্বাচন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা, নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার, জঙ্গিবাদ বিষয়ে তাদের অবস্থানসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। দলের নারী নেতাদেরও এসব বৈঠকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জুলাই বিপ্লবের পর জামায়াতের নেতারা চীন সরকারের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে ইউরোপ সফর করেন দলটির আমির ও শীর্ষ নেতারা। এ সময় যুক্তরাজ্য সফরও করেন জামায়াত আমির। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও মতবিনিময় অব্যাহত রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কানাডা ও আমেরিকা সফরের পাশাপাশি আগামী দিনে ইউরোপ সফরেরও পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষায় জামায়াত আমিরের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। এতে নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ অন্তত ১০ জন শীর্ষ নেতা আছেন। এছাড়া জামায়াত আমিরের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান।

জামায়াতের নেতারা বলেছেন, তারা সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চান। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপনে তারা আগ্রহী, যদিও এখনো কোনো বৈঠক হয়নি।

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে দলটির নেতারা জানান, দীর্ঘদিনের দমননীতির পর জুলাই বিপ্লব তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকা, ইতিবাচক রাজনীতি চালু করা এবং সংগঠনকে সক্রিয় করার প্রচেষ্টা আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top