মোঃ বাদশা প্রামানিক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবড়ী, টেপাখড়ি বাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি স্হানে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরানুজ্জামান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রওশন কবির মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তিস্তা নদী হতে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত পাথর জব্দ করেন।
জব্দকৃত সরকারী পাথরের স্তুপ গভীর রাতে তিস্তা নদী হতে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তরন কারী সিন্ডিকেটের গডফাদার চক্র কতৃক লুটতরাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি সম্পদ লুন্ঠনের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। লুট হয়ে যাওয়া পাথর উদ্ধার সহ ঘটনায় জড়িত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি সচেতন মহলের। নয়তো তিস্তা নদী হতে অবৈধ পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধে সরকারের নির্দেশিত আইন প্রয়োগে বিঘ্ন ঘটে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে।
বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় তিস্তা নদীত পাথর উত্তোলনের একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে,উপজেলা প্রশাসন কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তারই ধারাবাহিকতায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তিস্তা নদী হতে অবৈধ ভাবে উত্তোলনকৃত পাথর জব্দের কার্যক্রম কার্যক্রম শুরু করে।
জানা গেছে, একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় তিস্তায় শ্যলো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে বলু ও পাথর উত্তোলন করছে এলাকার শতধিক শ্রমিক। তিস্তা ব্যারেজের আশপাশ, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার , চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর ও বালু উত্তোলনে প্রায় ২০-২৫ টি প্রভাবশালী চক্র রয়েছে ।
এই চক্রগুলো অবৈধ্যভাবে বোমা মেশিন ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা দ্বারা, তিস্তা নদীর তিস্তা নদীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গভীর গর্ত করে পাথর ও বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।এর ফলে সরকারি সম্পদ উত্তোলন ও বিক্রি করে একশ্রেণী লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
তাছাড়াও তিস্তা নদীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গভীর গর্ত করায় দুই ধারের আবাদীজমি ও ঘরবাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন করে বারবার নদী তার দিক পরিবর্তন করছে। একটু মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হলেই নদী রক্ষার জন্য নির্মিত বাঁধ ও এসপার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে।ফলে তিস্তা ব্যারেজসহ দেশের সর্ববৃহৎ শেষ প্রকল্প পড়েছে হুমকির মুখে। বর্ষা এলেই তিস্তা পাড়ের মানুষের ভীষণ উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটে। জমিজায়গা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে বহু মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে।
চক্রগুলোর এসব অবৈধ্য কার্যক্রম বন্ধ ও নিরুৎসাহী করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা ও ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করে নৌকা ও শ্যালো মেশিন ভাঙচুর ,বালু পাথর উত্তোলনের যন্ত্রাংশ জব্দ এবং মোটা অংকের টাকা জরিমান করা হয়। তার পরেও চক্রটির রাষ্ট্রবিরোধী এ অবৈধ কার্যক্রম পরিচানা অব্যাহত রাখে।
এই চক্রটির নেতারা পাথর উত্তোলনের শ্রমিকদের অনেকটাই জিম্মি করে তিস্তা নদী হতে বালু ও পাথর উত্তোলনে বাধ্য করে । শ্রমিকদের উত্তোলকৃত পাথর প্রতি সে: ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কিনে ট্রলিতে করে নিয়ে গয়াবাড়ি ও খালিশা চাপানী ইউনিয়ন সহ শুটিবাড়ী বাজার সংলগ্ন এলাকার পাকা রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় স্তুুপ করে রাখে। পরবর্তীতে সেখান থেকে সেই পাথর গুলি প্রতি সেফটি ১২০-১৫০ টাকা দরে পাথর বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে মোটা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছেন অবৈধ পাথর উত্তোলন কারী চক্রের নেতারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান , সম্প্রতি তিস্তা হতে অবৈধ ভালো ও পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থান নীতি গ্রহণ করেন। তিনি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বালু ও পাথর অবৈধ পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও যন্ত্রাংশ জব্দ করেন এবং নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি মেশিন ও নৌকা বিনষ্ট করে দেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তা নদী হতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বাজার জাত করণের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃঢ় অবস্থানে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন । সরকারের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী অবৈধ পাথর চক্রের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইমরানুজ্জামান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রওশন কবির।
এ সময় সার্বিক সহযোগিতা করেন ডিমলা থানা পুলিশের একটি দল এবং টেপাখড়িবাড়ি ইউ,পি চেয়ারম্যান মো, রবিউল ইসলাম শাহীন । অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন ও বাজার জাত বন্ধে এ অভিযানে শুটি বাড়ি বাজারের পূর্ব পার্শ্বে শাইল্লার বাশঁতলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী চক্রের গডফাদার জাহাঙ্গীর আলমের চারটি পাথর ভাঙার যন্ত্র (মেশিন) ও প্রায় ৮ হাজার ঘনফুট (সেফটি) পাথর জব্দ করা হয়। জব্দকৃত মেশিন ও পাথরগুলি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মসুদ জিম্মায় রাখা হয়। গ্রাম্য পুলিশ মশিয়ার রহমামানকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়।
জব্দকৃত পাথরগুলির ঐ দিনেই (৩০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২ টার দিকে অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী চক্রের গডফাদার ও গয়াবাড়ি গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর খান ( ৪০) ও জুয়েল খান (৪৫), মৃত আকবরের ছেলে রজব আলী( ৩৫)এবং মৃত মোকাদ্দেছ (মোকা) আলীর ছেলে মো,জাফর আলী ( ৩৩) ও আব্দুর রহমান (৪৭) ৪ টি ট্রাক্টরে করে অধিকাংশ পাথর লুটতরাজ করে নিয়ে যায়।
গ্রাম্য পুলিশ মশিয়ার রহমান বাধা দিলে তাকে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখানো হলে তিনি পাথর নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মাসুদকে জানান। প্যানেল চেয়ারম্যান ঘটনা জানার পর বিষয়টি রাত আড়াই টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন । জব্দকৃত পাথর লুট করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিক ডিমলা থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই মো, আবুল কালাম আজাদ কে ঘটানা স্থানে পাঠান আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পাথর লুট কারীরা পালিয়ে যান।
এ ব্যাপারে গয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মাসুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমি ঘটনার রাত আড়াই ঘটিকার সময় আমার চৌকিদার মশিয়ার রহমানের মোবাইল ফোনে ঘটনায় বিষয় জানতে পেরে ঘটনার স্থলে গিয়ে পাথর লুট করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তৎক্ষণিক আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে ঘটনাটি অবহিত করি।
ডিমলা থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই মো, আবুল কালাম আজাদ জানান, ইউএনও স্যারের মোবাইল ফোন পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেলে আমার উপস্থিত টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যান।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো, ইমরানুজ্জামান, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জব্দকৃত পাথর লুণ্ঠন কারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।