রবিউল ইসলাম বাবুল, রংপুর প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মূল ফটক দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এতে করে সরকারি সেবা নিতে আসা প্রবীণ, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র জনগণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
অন্যদিকে সমাজসেবা অফিসার ও অফিস সহকারী হুদার দুর্নীতি, অনিয়ম ও অগণতান্ত্রিক আচরণে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীগন।
অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানার গাফিলতি, অমনোযোগিতা এবং সেবাপ্রত্যাশীদের প্রতি অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে।
রবিবার ( ১২ অক্টোবর) আদিতমারী উপজেলার সমাজসেবা অফিস গিয়ে দেখা যায়,আতিদমারী সমাজসেবা কার্যালয়ের মূল ফটকটি বন্ধ। ফটকের সামনে ঝোপঝাড়,খসে পড়া দেয়াল এবং দীর্ঘদিনের তালা যেন এই অফিসের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সেবা নিতে আসা ভূক্তভোগীদের অফিসে প্রবেশ করতে বিকল্প সরু পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা অসুস্থ, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রায় অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশ্য না করার শর্তে আদিতমারী সমাজসেবা অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক,পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, বিধবা, যুবক, ও বৃদ্ধ বলেন,”প্রতিবার অফিসে আসি ভাতার কাগজপত্র বা তথ্য জানার জন্য, কিন্তু মূল ফটক থাকে তারা বন্ধ। কয়েক শত মিটার ঘুরে উপজেলার মূল ভবন হয়ে ইউ,এন,ওর বাসার সামনে দিয়ে সমাজ সেবা অফিসের ভিতরে যেতে হয়। এতে রীতিমতো কষ্ট পোহাতে হয় পঙ্গু,বয়ঃস্কদের। অফিসের ভিতরে গিয়েও ঠিকমতো কেউ কথা বলে না। হুদা নামে একজন অফিস সহকারী আছেন তিনি অফিসে সব সময় থাকেন না। কেউ গেলে সহজে কাজ করে দিতে চায় না। আজ কাল করে মাস পার করে দেয়। টাকা ছাড়া কোনও ফাইল পার করেনা এই হুদা। হুদা কে টাকা দিলে কাজ করে না দিলে আজ কাল করে বেহুদাপনা তার নিত্য দিনের কর্মে পরিণত হযেছে বলে মন্তব্য ভুক্তভোগীদের।
আবার কোন কাজের জন্য পরামর্শ চাইতে বা কাগজ দেখাতে এলে সমাজসেবা অফিসার মাসুদ রানা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। কাজ করতে আসা পঙ্গু, প্রতিবন্ধি,বযস্ক,বিধবা, সবাইকে তিনি ভিক্ষুক মনে করেন,পঙ্গু বলে তিনি তাদের কে মানুষ বলে গণ্য করেন না এমন ব্যবহার তিনি করে থাকেন সর্বদা। অথচ সরকার তাকে আমাদের কাজের জন্যই চাকুরী দিয়ে এই চেয়ারে বসিয়েছে।
এদিকে আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসে রাতের আধাঁরে নয় বরং দিনের আলোতেই প্রকাশ্য দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে, দেখার কেউ নেই এটা যেন মগেরমুলুক।
সাধারণ জনগণ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,অফিসে বিভিন্ন ভাতাভোগীদের কাছ থেকে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ আর্থিক লেনদেন হয় বলেও অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন। সমাজ সেবা অফিসে যে কোনো কাজ করতে হলে হুদাকে দিতে হয় ঘুষ। নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তির নামে প্রতারণাও রয়েছে একাধিক অভিযোগ। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করা হয়,পরতে হয় নানা জটিলতায়।
নাম নানপ্রকাশ করার শর্তে একজন ইউ,পি সদস্য বলেন, এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। অনেকের নাম দুই বছরেও হয় না ,অথচ যাদের প্রাপ্য নয়, তারাও ভাতা পাচ্ছে। অফিসে গেলে কর্মকর্তা মাসুদ রানার সঙ্গে দেখা পাওয়া দুঃসাধ্য”ব্যপার।
জেলা ও আদিতমারী উপজেলা প্রশাসনের নীরবতায় দীর্ঘদিন অফিসের মূল ফটক বন্ধ থাকা এবং দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পরেনি। এতে সাধারণ মানুষ সরকারী সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারী প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা হারাচ্ছেন দিন দিন।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত অফিসের মূল ফটক খুলে দেওয়া, দুর্নীতির তদন্ত এবং মাসুদ রানা ও হুদার কার্যক্রমের উপর প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন আদিতমারী উপজেলার সূশীল সমাজ।
এ ব্যপারে আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাসুদ রানার সঙ্গে মুঠোফোন আলোচনা জন্য তাঁর সরকারী ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নাই।
সৃষ্ট ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা কার্লয়ের উপ-পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা হলে তিনি দৈনিক আমার বাংলাদেশ কে বলেন সমাজসেবা অফিসার মাসুদ রানা ও হুদার বিষয়ে কোন অনিয়ম পরিরক্ষিত হলে তা তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে জরুরী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।