১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা গ্রেফতারে সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের জন্য সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। আদালত গত ৮ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। জানা গেছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।

প্রসিকিউশন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের এখতিয়ার পুলিশের হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নির্দেশের ওপর নির্ভর করছে। ইতিমধ্যে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে গ্রেফতারের পর কর্মকর্তাদের রাখা হতে পারে।

এদিকে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সেনা আইনে বিচারের দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে সেনা আইন সংশোধন করে গুমের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিষয়টি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা কোর্টের আদেশ পাইনি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নির্দেশ এলে আমরা সহযোগিতা করব।”

পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে গত রোববার সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করা হবে, পরে আদালতের নির্দেশে তাদের ওই কারাগারে রাখা হতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব খলিল আহমেদ বিষয়টি ‘খুবই সেনসেটিভ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার দায়িত্বে থাকলেও এখনই কিছু জানানো সম্ভব নয়।”

কারা অধিদপ্তরের এআইজি জান্নাতুল ফরহাদ জানান, সাময়িক কারাগারটি পরিচালিত হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে। তবে কারা সেখানে থাকবেন এবং কতদিন মেয়াদে কারাগারটি পরিচালিত হবে— সে বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা অপরাধীদের বিচারের পক্ষে, তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, প্রমাণনির্ভর ও মানবাধিকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় রেখে মিলিটারি আইন সংশোধন করে বিচার প্রক্রিয়া চালানো উচিত।

প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন ‘এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে, ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। আদালত যেখানে রাখতে নির্দেশ দেবেন, আসামি সেখানেই থাকবেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top