নিজস্ব প্রতিনিধি:
ইরানের নতুন দূরপাল্লার স্টিলথ নিজঘাতী ড্রোনের নাম আরশ-২, যা আরশ-১-এর উন্নত সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইরানি সেনাবাহিনীর মহড়ায় প্রথম দেখানো এই ড্রোনটি ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প বিশেষজ্ঞদের নকশায় তৈরি এবং ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার সঙ্গে ‘শাহেদ ১৩৬’-এর পাশাপাশি আরশ-২-ও ইরানের নতুন ঘোষিত আঘাতকারী ড্রোন হিসেবে সামনে এসেছে।
ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, আরশ-২-এর দীর্ঘ পাল্লা, উচ্চ লক্ষ্যবস্তু নির্ভুলতা এবং রাডার সারফেসকে বাইপাস করার ক্ষমতা এটিকে আক্রমণাত্মক ড্রোন প্রযুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছে। সামরিক কমান্ডাররা জানিয়েছেন, ড্রোনটি সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলা এবং নির্দিষ্ট কৌশলগত লক্ষ্য ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিকল্পিত।
ইরানি সামরিক সূত্রে বলা হয়েছে, আরশ-২-কে কৌশলগতভাবে তেল আবিব ও হাইফার মতো উপকূলীয় শহরগুলিকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে—এটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিওমারস হায়দারির ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর ঘোষণায় স্পষ্ট হয়। আরশ-২-এর ডেল্টা আকৃতির ডানা উচ্চ গতি অর্জন ও জ্বালানি সাশ্রয়ের দিক থেকে ডিজাইন করা; এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪.৫ মিটার এবং ডানার বিস্তার প্রায় ৪ মিটার। বাহ্যিকভাবে এটি কিয়ান-২ ড্রোনের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ, এবং শাহেদ ১৩৬-র তুলনায় এর ক্ষমতা ও পরিসর অনেক বেশি বলে ধরা হচ্ছে।
কার্যক্ষমতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আরশ-২ প্রায় ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে লক্ষ্যবস্তু আঘাত হানতে সক্ষম। এটি একটি পিস্টন ইঞ্জিন (উল্লেখযোগ্য উদাহরণ MD550 বা MDSO-4-520, প্রায় ৫০ হর্সপাওয়ার) দ্বারা চালিত; সর্বোচ্চ গতি প্রায় ১৮৫ কিমি/ঘন্টা এবং কার্যকর উচু প্রায় ৩,৬০০ মিটার। ইরানি কমান্ডাররা বলছেন, আরশ-২ শুধুমাত্র কামিকাজে ব্যবহারযোগ্য নয়—এটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধের কৌশলেও ভূমিকা রাখতে পারে এবং আক্রমণের পূর্ব পর্যায়ে লক্ষ্যবস্তুর সম্পর্কে বারবার তথ্য সংগ্রহ করে নির্ভুলতা বাড়ায়।
উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে আরশ-২ ট্রাক-মাউন্টেড বক্স লঞ্চ সিস্টেম বা JATO (জেট অ্যাসিস্টেড টেকঅফ) লঞ্চারের মাধ্যমে দ্রুত ও নমনীয়ভাবে স্থাপনা করা যায়, যা বিভিন্ন ভূখণ্ডে কার্যকর করে তোলা সহজ করে। ইরানি সামরিক বিবৃতিতে ১৪ জুন সকালে কয়েকটি আরশ-শ্রেণির আত্মঘাতী ড্রোন ইসরাইলের বিরুদ্ধে আঘাত চালায় এবং বিশাল ধ্বংস ঘটায়—এটিই আরশ-শ্রেণির ড্রোনগুলোর দূরপাল্লার কার্যকারিতা প্রদর্শনের একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে।
কৌশলগতভাবে আরশ-২-এর আবির্ভাব ইরানের ড্রোন প্রযুক্তিতে দ্রুত অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয় এবং দূরপাল্লার ড্রোন সক্ষমতার কারণে অঞ্চলীয় নিরাপত্তার ভারসাম্যতে তা প্রভাব ফেলতে পারে। প্রায় ২০০০ কিলোমিটার পরিসরের কারণে আরশ-২ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন ও মিত্র সামরিক ঘাঁটিসহ বহুমুখী লক্ষ্যভিত্তিক আঘাতের ক্ষমতা রাখে—যা আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা কৌশলকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে ইরানের নিজস্ব, তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং দ্রুত উন্নতমানের ড্রোন প্রযুক্তি কৌশলগত স্বাধীনতা অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে।