১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিতর্কিত ব্যবসায়ী দিলীপ আগরওয়ালার গোপন কারামুক্তি নিয়ে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিতর্কিত স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী ও ধনকুবের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গোপনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক মামলায় আদালত তাকে জামিন দেন। জামিনের কাগজ দ্রুত কারাগারে পৌঁছানোর পর কঠোর গোপনীয়তায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত দিলীপের এমন হঠাৎ মুক্তি আদালত ও আইন অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া দিলীপ আগরওয়ালার এভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে বন্দি মুক্তির জন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো বন্দি মুক্তি সাধারণত সম্ভব নয়। দিলীপ একজন উচ্চপ্রোফাইল আসামি হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের কোনো প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া তার মুক্তি হওয়া অস্বাভাবিক বলে দাবি আইনজীবীদের।

গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর জামিন পান দিলীপ। তিন দিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর গোপনীয়তায় মুক্তি পান। এ সময় কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট বা নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়নি। এমনকি কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরাও এ বিষয়ে নীরব ছিলেন।

সূত্র জানিয়েছে, কারামুক্তির পরপরই দিলীপ গা ঢাকা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার অবস্থান এখনো অজানা।

দিলীপ আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের বাণিজ্য উপকমিটির নেতা ছিলেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে ব্যর্থ হন। ৪ সেপ্টেম্বর গুলশান থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক মামলায় আসামি করা হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা চলমান।

একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, দিলীপের মুক্তির পেছনে রাষ্ট্রপক্ষের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল। ওই কর্মকর্তা দিলীপের ঘনিষ্ঠ এবং তাদের বাড়িও একই জেলায়। গ্রেফতারের পর থেকেই দিলীপকে মুক্ত করার একাধিক প্রচেষ্টা চালানো হয়, তবে ঢাকার বাইরে থাকা কিছু মামলার কারণে তা বিলম্বিত হয়।

গ্রেফতারের পর প্রায় এক বছর তিনি বন্দি ছিলেন, কিন্তু কারাগারে না থেকে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে। সেখানে আরাম-আয়েশে কোনো ঘাটতি ছিল না। স্ত্রী, সন্তানসহ আত্মীয়রা নিয়মিত সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি হাসপাতাল থেকেই মোবাইল ফোনে মামলার বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৮ অক্টোবর দিলীপ ও তার স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার বিরুদ্ধে মামলা করে। অভিযোগে বলা হয়, তারা হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া দিলীপের প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “যে কাউকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বেশ কয়েকটি মামলায় জামিনে ছিলেন। তবে তার কারামুক্তির বিষয়ে আমি অবগত নই।”

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আদালত তাকে আইনসম্মতভাবে জামিন দিয়েছেন। বেইলবন্ড জমা দেওয়ার পর কারাগার কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী তাকে মুক্তি দেয়। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।” তিনি আরও জানান, দিলীপের পাসপোর্ট জব্দ অবস্থায় রয়েছে, ফলে বিদেশে পালানোর কোনো সুযোগ নেই এবং তিনি দেশেই আছেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top