জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী ও পবিপ্রবি প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ এবং তার সহধর্মিণী প্রফেসর ড. বাবুনা ফায়েজ শনিবার বিকেল ৩টায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে আগমন করেন। আগমনের শুরুতে পবিপ্রবি পরিবারের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম ফুল দিয়ে তাঁদের বরণ করে নেন। এসময় ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) ড. মহিবুল আহসান তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
বিকেল সাড়ে ৩টায় ইউজিসি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প ২ এর অধীনে নির্মানাধীন বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত অত্যাধুনিক জিমনেসিয়াম ভবনের উদ্বোধন করেন।
পরে বিকেল ৪টায় টিএসসির কনফারেন্স কক্ষে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখেন। উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আব্দুল লতিফ। সভার শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পসহ সার্বিক অগ্রগতি ও চলমান অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ এবং তাঁর সহধর্মিণীর পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আগমন উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বলেন,“গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যেই দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অগ্রগামী অবস্থানে রয়েছি।
তবে গবেষণা তহবিলের সীমাবদ্ধতা বর্তমানে আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান করা হয়, তবে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে এবং আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে।”উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন,“ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি লেকের বর্তমান দুরবস্থা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
এসব লেক পাইলিংয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন করা গেলে তা শুধু নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে না; বরং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা আরও ত্বরান্বিত করতে ইউজিসির সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস. এম. এ. ফায়েজ তাঁর বক্তব্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,এত স্বল্প সময়ে এত সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও অর্থবহ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। উপাচার্য মহোদয় এবং তাঁর নিবেদিতপ্রাণ টিমকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।”তিনি পবিপ্রবির সার্বিক অগ্রগতি, শিক্ষা ও গবেষণামুখী কার্যক্রমের প্রশংসা করে আরও বলেন,এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মূল ভুমিকায় রয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। তাঁর চৌকস ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।”
প্রফেসর ফায়েজ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশেষ নজরে রাখার আশ্বাস প্রদান করে বলেন,“একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণশক্তি নিহিত থাকে তার গবেষণায়। শিক্ষকরা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন, তবে সেই দেশ অনিবার্যভাবে অগ্রগতি অর্জন করবে। তবে শুধু শিক্ষকদের প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়— সরকারেরও উচিত গবেষণাকর্মে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও প্রণোদনা প্রদান করা।” তিনি আরও বলেন,“বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের ওঠানামার সুবিধার্থে একটি লিফট স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছি।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,“আমাদের ছাত্রছাত্রীরাই আমাদের আশার প্রতীক ও প্রেরণার উৎস। তাদের কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে, তাদের সম্ভাবনাকে লালন করতে হবে। এই তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে, আর আপনারা—শিক্ষকগণ—তাদের সেই আলোকবর্তিকা।” বক্তব্যের শেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান আয়োজক সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।