২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সাব-জেলে দিন কাটাচ্ছেন গুম খুনে অভিযুক্ত প্রভাবশালী সাবেক সেনা কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

গত সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীতে তারা ছিলেন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালনে ছিলেন দৃশ্যমান প্রভাবশালী। কেউ কেউ ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রকও। যাদের নির্দেশে একসময় বহু মানুষ কারাবন্দি হয়েছেন—সময় বদলে এখন তারাই গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাগারে।

তিনটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া সেনাবাহিনীর ১৫ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বর্তমানে সেনানিবাসে অবস্থিত সাব-জেলে রয়েছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) ছিল তাদের প্রথম দিন, যেদিন তারা স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। সাক্ষাতের সময় সাব-জেল এলাকায় সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ।

কারা সূত্রে জানা গেছে, সকল আসামির পরিবারের সদস্যরা সেদিন সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন। কেউ কেউ বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এলেও, নিরাপত্তাজনিত কারণে সেগুলো ভেতরে নিতে দেওয়া হয়নি। তাদের দেওয়া হয় কারা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত খাবার। সাক্ষাতের নির্ধারিত সময় ছিল আধা ঘণ্টা, কিন্তু স্বজনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রত্যেককে ২০ মিনিট করে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন দুইজন এআইজি (প্রিজন্স), তিনজন ডেপুটি জেলার ও জ্যেষ্ঠ কারা কর্মকর্তা।

কারা কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, সাক্ষাতের সময় আবেগপ্রবণ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঘটতে পারে। তাই আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সাক্ষাৎ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।

কারাবিধি অনুযায়ী, প্রথম সাক্ষাতের ১৫ দিন পর আবার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন তারা। প্রথম সাক্ষাতে শুধু স্ত্রী ও সন্তানরা দেখা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষাৎ হবে আগামী ৫ নভেম্বর, যেদিন কিছু আসামিকে আদালতে হাজির করা হবে।

এক কারা কর্মকর্তা জানান, সকালে তাদের নাশতায় ছিল রুটি ও সবজি। দুপুরে ডাল, ভাত, সবজি এবং পছন্দ অনুযায়ী মাছ বা মাংস দেওয়া হয়। রাতের মেন্যু ছিল দুপুরের মতোই।

সূত্র জানায়, সাব-জেলে তাদের সময় কাটছে শান্ত পরিবেশে। বেশির ভাগ সময় বই-পত্রিকা পড়া, নামাজ-কালাম, টেলিভিশন দেখা এবং বিশ্রামেই কাটছে। তাদের সহায়তায় কয়েকজন সেবক নিয়োজিত আছেন।

গ্রেফতার সেনা কর্মকর্তাদের আদালতে আনার জন্য প্রসিকিউশন পক্ষ সেনাবাহিনীর কাছে গাড়ি চাইলেও, বিতর্কের আশঙ্কায় সেনাবাহিনী তা দিতে রাজি হয়নি। পরে কারা কর্তৃপক্ষ একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ প্রিজন ভ্যান প্রস্তুত রাখে এবং সেই ভ্যানেই তাদের আদালতে আনা-নেওয়া করা হয়।

প্রত্যেক সেনা কর্মকর্তাকে সাব-জেলে পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। মোট ১৬টি কক্ষের মধ্যে তারা এখন পৃথকভাবে অবস্থান করছেন। তবে নতুন আসামি এলে এক কক্ষে দুই বা তিনজন করে রাখা হতে পারে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, “সাব-জেলটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনেই থাকলেও সব নিয়ম-কানুন অন্যান্য কারাগারের মতোই মানা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বুধবার আমি নিজে সাব-জেলে গিয়েছিলাম। আসামিদের কিছুটা বিমর্ষ মনে হয়েছে। তারা এখনো পুরোপুরি পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি। তবে কেউ অস্বাভাবিক আচরণ করেনি। আমি তাদের বলেছি— এখানে অবস্থানকালে অবশ্যই কারাবিধি মেনে চলতে হবে।”

সুরাইয়া আক্তার জানান, আসামিরা বিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সাব-জেলের নিয়ম অনুসারে জীবনযাপন করছেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top