২৫শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

লালমনিরহাটে ট্রাক বোঝাই ৪১৬ বস্তা সার জব্দ: ডিলারের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা

রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ

লালমনিরহাটে সরকারি বরাদ্দ সার মজুদ করে অধিক মুনাফার আশায় খুচরা বিক্রির অপরাধে পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার উমর ফারুকের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার সকালে পাটগ্রাম লালমনিরহাট মহা- সড়কে ট্রাক বোঝাই সার অধিক মূল্যে বিক্রয় উদ্দেশ্য নিয়ে যাওযার পথে এ ঘটনাটি ঘটে।

উপজেলা প্রসাশন ও পূলিশ সূত্রে জানা গেছে স্থানীয় জনতার দেয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশের নেতৃত্বে এবং পুলিশের সহযোগিতায় একটি টিম এই অভিযান পরিচালিনা করে ট্রাক বোঝাই ৪১৬ বস্তা সার জব্দ করেন।

এ জব্দ করা সারগুলো সরকারি বরাদ্দ হিসেবে ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করার কথা থাকলেও, অভিযুক্ত ডিলার ফারুক হোসেন তা মজুদ করে রাখেন এবং পরে তা অধিক মূল্যে বিক্রির জন্য ট্রাক বোঝাই করে পাচারের সময় কৃষক তা বুঝতে পেরে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনা স্থলে পৌঁছে জব্দকৃত সার উপজেলা কৃষি অফিসারের হেফাজতে রাখা হয়।

এ ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাস শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার ফারুক হোসেন (অগ্রণী ট্রেডার্স)-কে সার ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৬ অনুযায়ী ৩০ (ত্রিশ হাজার) টাকা জরিমানা করেন।

এসময় পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ সদস্য ও কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এ জব্দকৃত সার কৃষকের মাঝে বিক্রয়ের নির্দেশ দিয়েছেন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাস। জব্দ করা ৪১৬ বস্তা সার সরকার নির্ধারিত মূল্যে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করা হবে বলে জানান তিনি।

কৃষকরা জানান, এসকল অসাধু ডিলারের কারণে বাজারে সার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষকগন সঠিক সমযে সার পেত না কৃষক কে দাম বেশী দিয়ে সার কিনতে হতো। ফলে চরম ভোগান্তিতে ছিলেন কৃষকগন এ অবস্থায় কেউ কেউ সরকারি ডিলারের দোকানে গিয়ে “সার নাই” কথা শুনে ফিরে আসতেন।

কৃষক আবদুল হালিম বলেন,আমরা নিয়মিত ডিলারের দোকানে গিয়ে সার চেয়েছি, তারা বলতো সার শেষ। অথচ এখানে এত সার মজুদ ছিল! প্রশাসন না ধরলে হয়তো আমরা কখনোই জানতে পারতাম না।”

উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রযেছে প্রশাসন। সার ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কোনো ডিলার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সার মজুদ, পাচার বা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কৃষকদের প্রাপ্য ভর্তুকিযুক্ত সার যাতে যথাসময়ে পৌঁছায়, সে লক্ষ্যে প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাটগ্রাম উপজেলার সূশীল সমাজের এক ব্যক্তি বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের গাফিলতি, মাঠ পর্যায়ে সঠিক সময়ে মনিটরিং না থাকায় ডিলার গন এমন জঘন্য কাজ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। ফলে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলস্বরূপ কৃষকগণ সঠিক সময় সার পায় না যদিও বা পায় দ্বিগুণ মূল্যে খুচরা বিক্রেতার নিকট কিনতে হয় এটাই তার বড় প্রমান।

স্থানীয় এক কৃষক প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই ধরনের অভিযান নিয়মিত হলে কৃষকেরা উপকৃত হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা ভয় পাবে।” তারা আরও বলেন, “কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সার সরবরাহে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরী এবং যে সকল ডিলার এমন কাজ করবে তার লাইসেন্স বাতিল করলে অন্য ডিলারগন ভয়ে আর এমন কাজ করবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যপারে লালমনিরহাট জেলার উপ-পরিচালক সাইখুল আরিফিনের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি একটি মারাত্মক অপরাধ। অভিযুক্ত ডিলারের ৩০ হাজর টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং চুরি করে ট্রাক বোঝায় সার বিক্রয় করার অপরাধে আমরা জেলা পর্যায়ে মিটিং করে ঐ ডিলারে বিরুদ্ধে জরুরী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব,যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো ডিলার এমন কাজ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top