রিফাজ বিশ্বাস লালন, ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দায়িত্বরত আর এম ও ডা: শাহেদুল ইসলাম শিশিরের উপর এম্বুলেন্স মালিক ও ক্লিনিক মালিকদের সিন্ডিকেটের ভাড়াটে লোক দ্বারা পরিকল্পিত শারীরিক আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে ও হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণের দাবিতে আজ সকালে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা। ঈশ্বরদী নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মুখপাত্র সোহাগ এই আয়োজন করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যমান অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, দালালচক্র, দুর্নীতি ও লুটপাটসহ সকল অরাজকতা অবিলম্বে বন্ধ, হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি, পেশাজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের যৌক্তিক দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেন।
ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক, গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করুণ পরিস্থিতির দিকে। দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও দালালচক্রের কবলে পড়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লেখক সরোযারজ্জামান মনা বিশ্বাস বলেন এই হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে তুলেছে।
বিদ্যমান অরাজকতা ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে সৃষ্ট এই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, দালালচক্র ও দুর্নীতিবাজ বলয় এখনো সক্রিয়। ৫ অগাষ্টের পরবর্তি সময়ে ইউএইচএফপিও ও আরএমও পরিবর্তনের পরও এই প্রভাবশালী গোষ্ঠী হাসপাতালের সুষ্ঠু কার্যক্রমে বারবার বাধা সৃষ্টি করছে।
বক্তারা আরো বলেন অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার আলমগীর, নাইটগার্ড নজরুল, নার্স কামরুন্নাহার পারভীন ও তার স্বামী, এমটিপিআইসহ কিছু চিহ্নিত কর্মচারী ও তাদের সহযোগীরা এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থেকে হাসপাতালের সেবার মান ধ্বংস করছেন। তাদের কারণে চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের পক্ষে স্বাভাবিক ও সৎভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, বর্তমান কর্মকর্তারা আন্তরিক হলেও এই সিন্ডিকেটের প্রবল চাপের মুখে কার্যকর পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সিন্ডিকেট আংশিকভাবে উচ্ছেদ হওয়ায় আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সম্মানিত এসিল্যান্ড মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। তবে হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা ও সেবার মানে দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।
সংকট ও জনজীবনের ঝুঁকি
মারাত্মক জনবল সংকট:
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীর সংখ্যা নির্ধারিত সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এই স্বল্প জনবল দিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে সেবার মান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
দায়িত্বহীনতা ও ঝুঁকি:
জনবল সংকটের সুযোগে কখনও কখনও নাইটগার্ড বা অন্যান্য কর্মচারীরা ডাক্তারের ভূমিকা নিয়ে ইনভেস্টিগেশন বা প্রেসক্রিপশনে হস্তক্ষেপ করছেন — যা রোগীর জীবন ঝুঁকির কারণ হচ্ছে।কমিশন বাণিজ্য ও দুর্নীতি: কিছু অসাধু নার্স ও কর্মচারীর সহায়তায় ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালের দালালচক্র সক্রিয়ভাবে কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি সরকারের বিনামূল্যে প্রদেয় টিকা ও ভ্যাকসিনও টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার মতো জঘন্য অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে।
ঈশ্বরদীর গুরুত্ব ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা
ঈশ্বরদী একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইপিজেড, প্রাণ গ্রুপ, বেঙ্গল মিলসসহ অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে অবকাঠামো, জনবল ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এই বিশাল জনগোষ্ঠী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা এক বড় মানবিক সমস্যা।
এই মানববন্ধন থেকে কিছু দাবি তুলে ধরা হয় দাবিগুলো স্বচ্ছ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি: ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সক্রিয় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, দালালচক্র ও দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ:
হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং দালালদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
সেবার মান উন্নয়ন:
হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নে কঠোর প্রশাসনিক তদারকি ও নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা। জনবল সংকট নিরসন: স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে জনবল সংকট নিরসন করা।
১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ:
শিল্পাঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করতে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে অবিলম্বে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা।