২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, দুবাই-যুক্তরাজ্যে ৫৯৭ বাড়ির সন্ধান

নিজস্ব প্রতিনিধি:

নিজের প্রতিষ্ঠান ও অস্তিত্বহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে। এই বিপুল অর্থে তিনি দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৫৯৭টি বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাইফুজ্জামান চৌধুরী সরকারি প্রভাব ব্যবহার করে বেপরোয়াভাবে ঋণ গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব ছিল। ব্যাংকগুলোও কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন করেছে। কখনও নিজের কর্মচারীদের মালিক বানিয়ে, আবার কখনও এক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলে তিনি অর্থ পাচার করেছেন।

বিএফআইইউ জানায়, ২০১৪ সালে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর তার এবং তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে বিদেশে সম্পদ গঠন করেন তিনি। এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে প্রথমে দুবাইয়ের জেবা ট্রেডিং কোম্পানির নামে পাঠানো হয়, পরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তার নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়।

২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ২৩১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেন। এই ঋণের একটি অংশ নিজের আরামিট গ্রুপের ব্যাংক হিসাবে জমা দেন, বাকিটা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবে পাঠিয়ে নগদে উত্তোলন করেন। এছাড়া এলসির মাধ্যমে ওভার ইনভয়েসিং করে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করেন।

অর্থ পাচারের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মানি লন্ডারিং মামলা করে। সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, তিনি দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন। এই অর্থে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দুবাইয়ের বার্শা সাউথ, গালফ কমার্শিয়াল, বুর্জ খলিফা, জাবিল, মার্শা দুবাইসহ বিভিন্ন এলাকায় ২২৬টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের নামেও দুবাইয়ে দুটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিএফআইইউ জানায়, যুক্তরাজ্যে তার ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। দুবাইয়ে ২২৬টি বাড়ির মূল্য ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্কে ৯টি বাড়ির মালিক তিনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ঋণ জালিয়াতি ঢাকতে একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেয়ারিং করেছেন। যেমন—২০১৮ সালে ইউসিবি ব্যাংক থেকে অনুমোদনের আগেই ২১ কোটি টাকা ঋণ ছাড় করা হয়। পরে ওই টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করে আরামিট সিমেন্টের ঋণ সমন্বয় করা হয়। একইভাবে এসএস ট্রেডিং নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা অন্য ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হয়, যা ব্যাংকিং নিয়মবিরুদ্ধ।

এ ছাড়া শাকিল এন্টারপ্রাইজ, সুপিরিয়র রেডি মিক্স কনক্রিট, এন মোহাম্মদ ট্রেডিং করপোরেশন ও সাবিসা মাল্টিট্রেডসহ আরও কয়েকটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল ঋণ নেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচারের পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিজেই।

একই সঙ্গে আব্দুল আজিজ নামে এক কর্মচারীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ইউসিবি ব্যাংকের আটটি শাখায় ১২টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খোলা হয়, যার মাধ্যমে দুর্নীতির অর্থের গতিপথ গোপন করা হয়।

ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে জানতে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top