৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ, অস্থিরতা তৈরি: ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি:

দেশের বাজারে ক্রমান্বয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা নানা প্রশ্ন তুলছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে বুধবার মান ভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, পাইকারি বাজারে যার মূল্য ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌসুম শেষে দেশি পেঁয়াজের যোগান কমে যাওয়ায় এবং ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি হয়েছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ দেশের একাধিক খুচরা বাজার ও মুদি দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম গেল সপ্তাহজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে।

রাজধানীর গুদারাঘাট কাঁচা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, “বুধবার ১০০ টাকা বেচছিলাম, আজ মান ভেদে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে আমরা কিনতে পারি, সেভাবেই তো বিক্রি করব। দাম কয়দিনের মধ্যেই বাড়ছে।”

এদিকে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও রাজশাহীর পাইকারি ব্যবসায়ী এবং পেঁয়াজ আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আইপি বা আমদানি অনুমতি অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে।

তাদের মতে, চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে কয়েকদিনের মধ্যে যদি যোগান না বাড়ে, তাহলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।

তবে পেঁয়াজের দাম আর বাড়ার কোনো কারণ দেখছে না বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বা ক্যাব। সংস্থাটি বলছে, কিছুদিনের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে এবং এই মুহূর্তে আমদানি অনুমতি দেওয়া হলে কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।

তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের হঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কেন?

বাংলাদেশে খাদ্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা অনেকটাই নিয়মিত বিষয়। বিশেষ করে যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর দাম নিয়ে বছরের কোনো না কোনো সময় আলোচনা-সমালোচনা, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটসহ নানা বিষয় সামনে আসে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। হঠাৎ গত ১০ দিনের ব্যবধানে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়া এবং পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকা বলছেন।

এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে যোগান ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একদিনের ব্যবধানে কীভাবে একটি পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়ে?

পেঁয়াজ আমদানিকারক ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, “অনেকদিন যাবৎ দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় যোগানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।”

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পেঁয়াজ উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। তাদের মতে, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদন তথ্য নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী মুনাফা বৃদ্ধি করতে চাইছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ থেকে ২৭ লাখ টন, আর দেশীয় উৎপাদন প্রায় ২১ লাখ টন। ফলে প্রতি বছর ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

দাম কি আরও বাড়তে পারে?

বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা গত ১০ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। আমদানি বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজই বাজারে প্রধান নির্ভরযোগ্য উৎস, তাই নতুন মৌসুমের ফলন না আসা পর্যন্ত দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এ বছর কিছুটা দেরিতে উৎপাদন শুরু হওয়ায় নতুন পেঁয়াজ ঘরে তোলার সময় আরও কিছুটা লাগবে বলে কৃষকদের জানিয়েছেন। তবে আগের মৌসুমের পেঁয়াজে ঘাটতি তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন ক্যাবের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন।

তবে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা দাবি করছেন, সরকার যদি আমদানি অনুমতি দেয়, তবে কয়েকদিনের মধ্যেই দাম কমতে পারে।

ক্যাবের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, “সরকারের উচিত আমদানির সুযোগ রাখা, যাতে দাম বৃদ্ধির হাত থেকে বাঁচা যায়।”

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top