৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিদেশে অবস্থানরত কর্মচারীর নামে বদলির আদেশে এবং বেতন নিয়ে প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন সুনামগঞ্জে

মামুন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

স্থানীয় সরকার বিভাগের এক সাম্প্রতিক বদলির আদেশকে ঘিরে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা পরিষদে দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা, বিতর্ক ও নানা প্রশ্ন।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে ১৮ মে ২০২৫ তারিখে জারি করা হয় প্রথম বদলির আদেশ (স্বারক নং: ০৫.৪৬.০০০০.০০০.০০৭.১৯.০০০২.২৫.১২৮)।
এই আদেশে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক বিমলেন্দু রায়-কে বদলি করে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদে পদায়ন করা হয়।

এর আগে ৪ মে ২০২৫ তারিখে দ্বিতীয় এক আদেশে (স্বারক নং: ০৫.৪৬.০০০০.০০০.০০৭.১৯.০০০২.২৫.৯৮) মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক তারেক আহমেদ চৌধুরীর দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় উঠে আশার পর তারেক আহমেদ চৌধুরী কে বদলি করা হয় সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক হিসেবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ, সিলেট বিভাগ, সিলেট—এই আদেশে স্বাক্ষর করেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তারেক আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরই এই বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

অর্থাৎ, উভয় কর্মচারী পরস্পর বদলি হয়েছেন—একজন সুনামগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজারে, অন্যজন মৌলভীবাজার থেকে সুনামগঞ্জে।

তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের হিসাব রক্ষক বিমলেন্দু রায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
চাকরিতে বহাল থেকে তিনি ছুটির আবেদন করে বিদেশে গেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেও তার বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবে চলতে থাকে, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমন অবস্থায় বিদেশে অবস্থানরত ওই কর্মচারীর নামে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদে বদলির আদেশ জারি হওয়ায় জনমনে উঠেছে প্রশ্ন ও বিতর্কের ঝড়।
প্রশাসনিক সূত্র বলছে, এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের তদারকি ও তথ্য যাচাই ব্যবস্থার ঘাটতির একটি বড় উদাহরণ।

অন্যদিকে, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ থেকে বদলি হওয়া হিসাব রক্ষক তারেক আহমেদ চৌধুরী এখনো পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রভাবশালী একটি মহল তার দায়িত্ব গ্রহণে চাপ ও প্রভাব বিস্তার করছে।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো—দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদে কোনো অফিসিয়াল হিসাব রক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন না। সেখানে কপিল কিষন তালুকদার নামে একজন অফিস সহকারী কার্যত হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন, প্রয়োজনে নতুন একজন নিয়মিত হিসাব রক্ষক নিয়োগের দাবি তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

অন্যদিকে, বিমলেন্দু রায়ের বিদেশে অবস্থান সত্ত্বেও তাকে অফিস আদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
অপরদিকে, মৌলভীবাজারের কর্মচারী তারেক আহমেদ চৌধুরী পরিপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারছেন না—ফলে দুই জেলার জেলা পরিষদেই হিসাব রক্ষক পদে কার্যত শূন্যতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল বলছেন, “যে কর্মচারী দেশে নেই, তার নামে বদলির আদেশ—এটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার ত্রুটির উদাহরণ। বিষয়টি উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা ও তদন্তের দাবি রাখে।”

তারা বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: স্থানীয় সরকার বিভাগ, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়
প্রথম স্বারক নং: ০৫.৪৬.০০০০.০০০.০০৭.১৯.০০০২.২৫.১২৮
দ্বিতীয় স্বারক নং: ০৫.৪৬.০০০০.০০০.০০৭.১৯.০০০২.২৫.৯৮
তারিখ: ১৮ মে ২০২৫

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top