১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

দীঘিনালার শাহপরান: চাকরির পেছনে নয়, কৃষিতেই সফলতার স্বপ্ন

মোঃ হাচান আল মামুন, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার জামতলী এলাকার তরুণ মোঃ শাহপরান, দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজে সফল হয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন—চাকরির পেছনে ছুটে নয়, নিজের মাটিতেই গড়া যায় সাফল্যের গল্প।

দীঘিনালা জামতলী পশু ডাক্তার মোঃ আফসার মিয়ার ছেলে শাহপরান বর্তমানে গড়ে তুলেছেন একটি ছোট হলেও সাফল্যমণ্ডিত সবজি ও হাঁসের খামার। বাড়ির পাশের তিন কানি জমিতে তিনি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কলা ও মৌসুমি সবজি চাষ করছেন। এবছর মাত্র এক কানি জমিতে লাউ চাষ করে বিক্রি করেছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকার লাউ, যা তাকে কৃষিকাজে আরও মনোযোগী হতে অনুপ্রাণিত করেছে।


শুধু লাউ নয়, জমির এক পাশে তিনি কলা চাষও করেছেন। কলা গাছের সবুজ পাতা ও ফলের দৃশ্য তার খামারের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শাহপরান জানান, “কলা চাষ তুলনামূলক সহজ এবং সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আমি চাই জমির প্রতিটি অংশকে কাজে লাগাতে।”
কৃষিকাজের পাশাপাশি শাহপরান বাড়িতে পালন করছেন বেলজিয়াম জাতের হাঁস। তিনি বলেন, “হাঁস পালন খরচে কম, কিন্তু লাভজনক। কৃষির পাশাপাশি এটি আমার পরিবারের আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে।”

এই কৃষি উদ্যোগে শাহপরানকে সহযোগিতা করছেন তার বাবা পশু ডাক্তার আফসার মিয়া। তিনি গর্বভরে বলেন, “আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে—এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। আমি চাই, ও আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করুক, যাতে এলাকার তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।”

শাহপরান বলেন, “পড়ালেখার পাশাপাশি অবসর সময়টা আমি কৃষি ও হাঁস পালনের কাজে ব্যয় করি। এই বছর লাউ ও কলা চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। ভবিষ্যতে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজি ও হাঁসের খামার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক তরুণেরই পড়ালেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়া জরুরি। তাহলেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে, দেশও হবে উপকৃত।”
স্থানীয়রা জানান, শাহপরানের এই উদ্যোগ এলাকায় তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ গ্রামে কৃষি ও হাঁস পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

দীঘিনালা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সুমন বলেন, “পাহাড়ি এলাকায় সবজি, কলা চাষ ও হাঁস পালনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শাহপরানের মতো তরুণরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে পার্বত্য অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”

শাহপরানের সাফল্য আজ এলাকার তরুণদের অনুপ্রেরণার প্রতীক। তিনি দেখিয়েছেন—নিজের হাতে গড়া পরিশ্রমই জীবনের সবচেয়ে বড় মূলধন

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top