১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শিক্ষকসহ আহত ১২

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শাখা ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে ছাত্রদলের বাসেত গ্রুপ ও সুমন সরদার গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে সমঝোতা বৈঠক চলাকালে তিন দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের সামিউদ্দিন সাজিদ, আল-আমিন, আশরাফুল, প্রত্যয়, ইব্রাহিম, জনি ও জাহিদ; রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদী এবং বাংলা বিভাগের ছাব্বীর।

জানা গেছে, আহত সামিউদ্দিন সাজিদ ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য জাহিদ হাসান জনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত এবং জাফর আহমেদ গ্রুপের অনুসারী। অপরদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদী, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য মাশফিক রাইন, আতাউল্লাহ আহাদ ও বাংলা বিভাগের আশরাফুল ইসলাম সুমন সরদার গ্রুপের অনুসারী।

জানা যায়, সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে আস-সুন্নাহ পরিবহনের বাসে মার্কেটিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজিদ ও তাঁর বন্ধুরা কথা বলছিলেন। এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদী তাঁদের কথা বলতে নিষেধ করেন এবং হুমকি দেন—‘তোমাকে দ্বিতীয় গেটে ঝুলিয়ে রাখব।’ পরে সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট ও হলে গিয়েও সাজিদের খোঁজ নেন।

আজ দুপুরে দ্বিতীয় গেটের সামনে সাজিদ তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকলে সাদী, আহ্বায়ক সদস্য মাসফিক, বাংলা বিভাগের আশরাফুল ও যুগ্ম আহ্বায়ক আরাফাত সেখানে গিয়ে তাঁকে ডাকেন। কিছুক্ষণ পর সাদী ও তাঁর সহযোগীরা অতর্কিতভাবে সাজিদের ওপর হামলা করেন। তাঁকে বাঁচাতে গেলে আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিম ও জাহিদের ওপরও হামলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাজিদ দ্বিতীয় গেটের সামনে এক নেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় পেছন থেকে সাদীর অনুসারীরা এসে তাঁকে আঘাত করতে শুরু করেন। ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা ঠেকাতে গেলে তাঁদের সামনেই পিটুনি চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, “সাজিদকে যারা মেরেছে, তাদের মধ্যে আমার সংগঠনের সদস্যও ছিল। আমি থামাতে গিয়েও পারিনি। তারা এমন আচরণ করছিল, যেন আমরাই সন্ত্রাসী আমাদের যা ইচ্ছা তাই করব।”

পরে দ্বিতীয় দফায় শান্ত চত্বরে ফের সংঘর্ষ হয়। সেখানে চেয়ার দিয়ে আল-আমিনের মুখে আঘাত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল। তিনি ও অন্য সিনিয়র নেতারা দু’পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিনের কক্ষে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সাদীকে সেখানে আনার সময় তৃতীয় দফায় আবার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনি, রাব্বীসহ আরও কয়েকজন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. নঈম আক্তার সিদ্দিকী, ফেরদৌস হোসেন ও মাহাদী হাসান জুয়েলসহ কয়েকজন শিক্ষকও আহত হন।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ বলেন, “গতকাল সকালে আস-সুন্নাহ বাসে কথা বলছিলাম। সাদী এসে ধমক দিয়ে বলে—তোরে সেকেন্ড গেটে ঝুলিয়ে রাখব। আজকে ১৫-২০ জন নিয়ে এসে আমার, আল-আমিন, প্রত্যয়, ইব্রাহিমদের ওপর হামলা করে। গতকাল হলে গিয়েও আমার খোঁজ নিয়েছে।”

আহত শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, “চেয়ার দিয়ে এমনভাবে মুখে আঘাত করেছে যে মুখ ফুলে গেছে, চেয়ারটাই ভেঙে গেছে।”

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদার বলেন, “আস-সুন্নাহ হলের বাসের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত না।”

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম। দুই পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করেছি। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে বসে সমঝোতা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, “প্রাথমিকভাবে দুই বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। পরে তা বড় আকার ধারণ করে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top