মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের রাজনীতি থেকে দূরে থেকে এককভাবে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকলেও উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা নীলফামারীতে ইতোমধ্যে দলটির প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
নীলফামারী জেলার চারটি সংসদীয় আসনে (ডোমার-ডিমলা, সদর, জলঢাকা, সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ) ইতোমধ্যেই নির্বাচনী উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো যেমন বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের কৌশল অনুযায়ী মাঠে সক্রিয়, তেমনি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে এনসিপি।
জেলা এনসিপি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত তিনটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা): রাশেদুজ্জামান রাশেদ, জেলা এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নীলফামারীর মুখপাত্র।
নীলফামারী-২ (সদর): ডা. কামরুল ইসলাম দর্পণ, এনসিপির জেলা সদস্যসচিব ও বিশিষ্ট চিকিৎসক।
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ): আবু সাঈদ লিওন, উত্তরাঞ্চলীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক।
দলের জেলা আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ বলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। তবে এই তিন প্রার্থী মাঠে কাজ শুরু করেছেন। এনসিপি এবার জনগণের বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
ফেসবুকে দেওয়া এক ঘোষণায় রাশেদুজ্জামান রাশেদ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যে তিনি নীলফামারী-১ (ডোমার–ডিমলা) আসনে এনসিপির “শাপলাকলি” প্রতীকে প্রার্থী হতে চান। তিনি বলেন— “আমাদের রাজনীতি ক্ষমতার নয়, ন্যায়ের রাজনীতি। দুর্নীতি, কালোটাকা ও পেশিশক্তির রাজনীতি থেকে মানুষ মুক্তি চায়। আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মাঠে আছি এবং থাকব।”
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও যোগ করেন— “স্বাধীনতার পর থেকে ডোমার ও ডিমলা অবহেলিত। কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলে কোনো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের সঙ্গে মাটির মানুষ হয়ে কাজ করলে এই আসনের চিত্র বদলানো সম্ভব।”
ডা. কামরুল ইসলাম দর্পণ, যিনি নীলফামারী-২ (সদর) আসনে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী, বলেন— ব্রিটিশরা নীলফামারী শোষণ করে গেছে তাই উনি নীলফামারীতে নীলকুঠি ইউনিভার্সিটি স্থাপন করতে চান.. সেই ইউনিভার্সিটিতে এমন ভাবে ছাত্রছাত্রীকে দক্ষ ভাবে তুলতে চান যেন তারা ইংল্যান্ডে গিয়ে চাকরি করে মাথা উঁচু করে দেশের সুনাম অর্জন করতে পারেন। ধর্ম-বর্ণ বৈষম্যহীন সুশাসনের নীলফামারী গড়তে চান। নীলফামারীতে একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান।
ডা. দর্পণ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাইনিজ কোরিয়ান ইংলিশ জাপানিজ ভাষার উপর আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান যেখানে নীলফামারীর সকল যুবকরা এই ভাষা শিখে বিশ্ববাজারে কর্মদক্ষতায় অনন্য ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান—এই তিন খাতে গঠনমূলক পরিবর্তন আনাই আমাদের লক্ষ্য। তরুণদের নিয়ে সুশাসন ও মানবিক রাজনীতির ধারা তৈরি করতে চাই।”
নীলফামারীতে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়ত, খেলাফত মজলিসসহ একাধিক ইসলামপন্থী দল ইতোমধ্যে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।
বিএনপি (ধানের শীষ): সদর আসনে এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল, সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জে আব্দুল গফুর সরকার।
জামায়াতে ইসলামী (দাঁড়িপাল্লা): জেলার চার আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুরগাছ)—দুটি দলও চারটি আসনে পূর্ণ প্রার্থী দিয়েছে।
এছাড়া এবি পার্টি (ঈগল) ও গণঅধিকার পরিষদ (ট্রাক) জলঢাকা আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
নভেম্বরের শুরু থেকেই জেলার চার উপজেলায় পোস্টার, ব্যানার, কর্মীসভা ও উঠোন বৈঠকের হিড়িক পড়েছে। তরুণ ভোটারদের লক্ষ্য করে চলছে অনলাইন প্রচারণা। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি তরুণ সমাজকর্মী, চিকিৎসক ও উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচনী মাঠে ভিন্ন ধারা তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে এটি জেলার রাজনৈতিক চিত্রে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে। দলটির তরুণ প্রার্থীরা যদি ভোটারদের আস্থা অর্জনে সফল হয়, তবে আগামী নির্বাচনে নীলফামারীর রাজনীতিতে এনসিপি হতে পারে নতুন শক্তি।