১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জেলা পরিষদের অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের মানবিক উদ্যোগে ৮৭ জন অসহায় মানুষের মুখে স্বস্তির হাসি

তরফদার মামুন মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

আজ ১৩ নভেম্বর ২০২৫। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় অনুষ্ঠিত হলো এক অনুপ্রেরণামূলক মানবিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচি। জেলার সাতটি উপজেলার অসহায়, হতদরিদ্র, অসচ্ছল ও অসুস্থ—মোট ৮৭ জন নারী-পুরুষের মাঝে ২,৪৬,০০০ টাকা (দুই লক্ষ ছেচল্লিশ হাজার) আর্থিক অনুদান বিতরণ করা হয়।

এ সহায়তা শুধু অর্থ নয়—এটি মানুষের জীবনে এক টুকরো আশার আলো, মানবিক রাষ্ট্রের উষ্ণ বার্তা।

মানবিকতার নীরব উৎসব—মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি

সহায়তা গ্রহণ করতে আসা মানুষের চোখে ছিল ভরসা, কৃতজ্ঞতা ও দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘবের স্বস্তি। কেউ অসুস্থতার চিকিৎসা ব্যয়ে দিশেহারা, কেউ সংসারের নিত্যপ্রয়োজনেই পড়েছেন সংকটে—আজকের এই অনুদান তাদের জীবনে যেন নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি যোগাল।

এক বৃদ্ধা সহায়তা গ্রহণের সময় চোখ ভেজা কণ্ঠে বলেন— “এই সাহায্যের টাকা দিয়ে অন্তত ওষুধটা কিনতে পারবো।
এটাই আমার জন্য অনেক বড় সহায়তা।”

এই একেকটি কণ্ঠ যেন মানবিকতার অদৃশ্য সেতুবন্ধনের সাক্ষ্য বহন করে।

প্রশাসনের বার্তা—‘অসহায়ের পাশে রাষ্ট্র সবসময় আছে’

অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়— সমাজে যারা সবচেয়ে পিছিয়ে, যাদের জীবন কষ্টে ভরপুর; তাদের পাশে দাঁড়ানোই প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব। প্রয়োজনের মুহূর্তে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে নিয়মিতভাবেই।

এক কর্মকর্তা বলেন— “মানুষই রাষ্ট্রের শক্তি। কেউ যেন চিকিৎসাহীন, খাবার বঞ্চিত বা কোনো বিপদে একা পড়ে না থাকে এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

বিভিন্ন উপজেলার মানুষের উপস্থিতিতে এক মানবিক মিলনমেলা

মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী থেকে অসহায় মানুষরা ভোর থেকেই আসতে থাকেন অনুষ্ঠানে।
কেউ সিএনজিতে, কেউ রিকশায়, কেউবা পায়ে হেঁটে বহু দূর থেকে এসেছেন—শুধু একটু সহায়তার আশায়।
তাদের অপেক্ষা, কষ্ট ও আশাবাদে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছিল এক নীরব মানবিক উৎসবে।

স্থানীয়দের প্রশংসা—এমন উদ্যোগ নিয়মিত হলে মানুষের কষ্ট অনেক কমবে

মৌলভীবাজারের সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন— দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু দায়িত্ব নয়; এটি এক ধরনের সামাজিক মর্যাদা।

এক স্থানীয় ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন “এটা শুধু অর্থসাহায্য নয়; এটা মানবিক সম্মান। অসহায় মানুষকে বোঝানো—রাষ্ট্র তোমাদের পাশে আছে।”

অনুদান পেয়ে অসহায় মানুষের চোখের জলে ভাসলো আনন্দ

অনুদান পাওয়ার মুহূর্তে অনেকের চোখেই দেখা গেছে অশ্রুসজল কৃতজ্ঞতা। হয়তো সহায়তার টাকা খুব বড় নয়, তবে তাতে ছিল আন্তরিকতা, সহমর্মিতা এবং শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর অদৃশ্য সাহস—যাকে টাকার সঙ্গে তুলনা করা যায় না।

মানবিক সমাজ গড়ার পথে জেলা প্রশাসনের অগ্রগামী ভূমিকা

এই আর্থিক সহায়তা অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা, ঘরোয়া প্রয়োজন, জরুরি ব্যয় কিংবা ঋণ পরিশোধে বড় ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করে—রাষ্ট্রীয় সহায়তা কাগজে-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বাস্তবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোই প্রশাসনের প্রকৃত দায়িত্ব।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের যৌথ মানবিক সহায়তা কর্মসূচি আজ আবারও দেখিয়ে দিল—একটি সমাজ তখনই মানবিক সমাজে পরিণত হয় যখন সেই সমাজ দুর্বল মানুষের হাত ধরে এগিয়ে যেতে শেখে। আজকের এই উদ্যোগ সেই মানবিক মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করল।

অসহায় মানুষের মুখের সেই সামান্য হাসিই প্রমাণ করে—এই উদ্যোগ সফল হয়েছে, এবং সমাজকে দিয়েছে নতুন উদাহরণ।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top