৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নীলফামারীর কৃষকেরা পুনরায় নিষিদ্ধ তামাক চাষে ঝুঁকছেন

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

মুনাফার প্রলোভনে নীলফামারীর কৃষকেরা আবারও নিষিদ্ধ তামাক চাষে ঝুঁকছেন। কৃষিজমিতে বৈচিত্র্য হারানো, খাদ্যশস্য উৎপাদনের হ্রাস এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তামাক চাষ শুধু মাটির উর্বরতা কমায় না, এটি পানির দূষণ বৃদ্ধি এবং শিশু ও নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ায়।

নীলফামারীর কিছু এলাকায় আগেও তামাক চাষ বন্ধ হয়েছিল, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুনাফার আশায় কৃষকরা পুনরায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং কৃষকদের বিকল্প ও লাভজনক চাষের দিকে উৎসাহিত করছে।

নীলফামারী সদর উপজেলার তামাক চাষী মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান “তামাক চাষে মাটির ক্ষতি হয় এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। সরকার যদি বিকল্প ফসলের সহায়তা দেয়, আমরা তামাক কমিয়ে অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হব।”

জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল এলাকার কৃষাণী রুবিনা আক্তার জানান “পরিবারের স্বাস্থ্যের জন্য আমি ধীরে ধীরে তামাক কমিয়ে সবজি ও ফলচাষ শুরু করেছি।”

ডোমার উপজেলার হরিণচড়া এলাকার হুমায়ুন কবীর জানান, “কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের পর বুঝেছি, তামাক চাষ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এখন আমরা আলু ও শাক-সবজি চাষে মনোযোগ দিচ্ছি।”

তামাক চায়ে অনীহা প্রকাশ করে জলঢাকার বেরুবন এলাকার চাষী আনছারুল আলম বলেন, “সরকারি সহায়তা পেলে আমরা সহজেই তামাক কমিয়ে বিকল্প লাভজনক ফসল চাষে যেতে পারব।”

সদরের পলাশবাড়ীর তরুণীবাড়ী এলাকার চাষী বিনোদ রায় বলেন, “মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে এবং পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আমরা তামাক কমিয়ে শাক-সবজি ও ফলের চাষ বাড়াচ্ছি।

তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে সাবেক প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানি বলেন, “তামাক চাষে মাটির উর্বরতা কমে এবং পরিবারের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে। যদি সরকার বিকল্প লাভজনক ফসলের সহায়তা দেয়, আমরা সহজেই তামাক কমিয়ে শাক-সবজি, আলু ও ফলচাষে মনোযোগ দিতে পারব।”

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, “তামাক চাষ মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, খাদ্যশস্য উৎপাদন কমায় এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। আমরা কৃষকদের তামাকের পরিবর্তে ধান, সবজি ও ফলজ চাষের মতো লাভজনক বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করছি।

সচেতন হোন, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখুন, এবং বিকল্প ফসল চাষে মনোনিবেশ করুন। একসাথে কাজ করলে আমরা একটি সবুজ ও উৎপাদনশীল উপজেলা গড়ে তুলতে পারব।”

স্থানীয় কৃষি সচেতন ও সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম জানান, “তামাক চাষ শুধু কৃষি জমি ধ্বংস করছে না, পাশাপাশি পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। মাটির উর্বরতা কমছে, অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং কৃষকরা স্বল্পমেয়াদী মুনাফার লোভে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়ছেন,”

তিনি আরও বলেন, “তামাক চাষ বর্জ্য ও রাসায়নিক ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ বাড়াচ্ছে। কৃষকদের নিরাপদ বিকল্প ফসল ও সচেতনতার মাধ্যমে এই বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।”

স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ডা. মিনা আক্তার বলেন, “তামাক চাষ এবং ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শ্বাসনালী, ফুসফুস ও হার্ট সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং তামাক চাষ থেকে বিরত থাকতে হবে।”

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top